ঢাকা, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

ট্রাম্পকে হারিয়ে নোবেল জয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো কে? জানুন পূর্ণাঙ্গ পরিচয়

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১০ ১৬:৪৮:১৬
ট্রাম্পকে হারিয়ে নোবেল জয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো কে? জানুন পূর্ণাঙ্গ পরিচয়

ভেনেজুয়েলার মাটিতে গণতন্ত্রের জন্য নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো। আর তার এই অদম্য স্পৃহা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের মাধ্যমে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো হেভিওয়েটদের পেছনে ফেলে এই লড়াকু নেত্রী কীভাবে অর্জন করলেন এই সম্মান?

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় আপসহীন সংগ্রাম

ভেনেজুয়েলার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মারিয়া কোরিনা মাচাদো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার সময় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং একনায়কতন্ত্র থেকে শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক পরিবর্তনের জন্য লড়াই করেছেন। ১৯৬৭ সালে জন্ম নেওয়া এই নারী, রাজনৈতিক দমননীতি, হুমকি এবং এমনকি জাতীয় পরিষদ থেকে বহিষ্কারের মতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও তার বিশ্বাসে অটল থেকেছেন। তিনি বর্তমানে ভেনেজুয়েলাতেই বসবাস করছেন এবং গণতন্ত্রের জন্য তার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষা থেকে সমাজসেবা: এক ব্যতিক্রমী পথচলা

মাচাদো প্রকৌশল ও অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তার কর্মজীবনের মোড় ঘুরে যায় সমাজসেবার দিকে। ১৯৯২ সালে তিনি কারাকাসে পথশিশুদের জন্য 'আতেনেয়া ফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোই ছিল এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

এর এক দশক পর, তিনি 'সুমাতে' নামক একটি সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হন। এই সংগঠনটি ভেনেজুয়েলায় মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করে। 'সুমাতে' ভোটার প্রশিক্ষণ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে অপরিহার্য।

রাজনৈতিক উত্থান ও দমননীতি: থেমে থাকেননি মাচাদো

২০১০ সালে মারিয়া কোরিনা মাচাদো নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তার এই বিজয় ছিল রেকর্ড সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে। তবে তার এই উত্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১৪ সালে তৎকালীন সরকার তাকে জাতীয় পরিষদ থেকে বহিষ্কার করে।

কিন্তু এই ধাক্কা তাকে থামাতে পারেনি। মাচাদো দৃঢ়তার সাথে তার লড়াই চালিয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি বিরোধী দল 'ভেন্তে ভেনেজুয়েলা'-এর নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১৭ সালে তিনি 'সয় ভেনেজুয়েলা' নামে একটি নতুন জোট গঠন করেন, যা ভেনেজুয়েলার সকল গণতন্ত্রপন্থী পক্ষকে একত্রিত করেছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই ও সরকারের বাধা

২০২৩ সালে মাচাদো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে, সরকার তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে, মাচাদো বিরোধী দলের বিকল্প প্রার্থী এদমুন্দো গনজালেস উরুতিয়ার প্রতি তার সমর্থন জানান।

সেই নির্বাচনে বিরোধী দল জয়ের দাবি করলেও, সরকার ফলাফল জাল করে ক্ষমতায় থেকে গেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনা ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন ফেলে দেয়।

নোবেল কমিটির বার্তা: শান্তির ভিত্তিই হলো গণতন্ত্র

মারিয়া কোরিনা মাচাদোর নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি কেবল তার দেশের জন্য নয়, বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের পক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা। নোবেল কমিটি তাদের ঘোষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, "গণতন্ত্র মানে হলো নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোট দেওয়ার অধিকার এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব পাওয়া... এই অধিকারই শান্তির ভিত্তি।" মাচাদো তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, এই মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করার জন্য কতটা আত্মত্যাগ করা যায়। তার এই বিজয়, বিশ্বজুড়ে সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণা।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ