ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে কারসাজি:তদন্তে বিএসইসি

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ০৮:৪৫:০৫
শেয়ারবাজারে কারসাজি:তদন্তে বিএসইসি

তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি-র চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল এবং এসকেএফ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটনসহ তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও কর্পোরেট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি, জালিয়াতি এবং কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগের ওপর অনুসন্ধান শুরু করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এই অভিযোগগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য বিএসইসি-র মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ একটি ত্রিসদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করেছে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনের কাছে পেশ করবে।

[জালিয়াতির মাধ্যম ও তদন্তের পরিধি]

কমিশনের সূত্র মতে, ব্যাংকটির দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান—এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শেয়ারবাজারে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড ও কারসাজি সংঘটিত হয়েছে। গঠিত কমিটি এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ ও কৌশলগত দিকগুলো বিশদভাবে খতিয়ে দেখবে। এ বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও সরকারিভাবে অবগত করা হয়েছে।

তদন্তকারী দলের সদস্যরা হলেন বিএসইসি-র অতিরিক্ত পরিচালক মো. কাওসার আলী, উপ-পরিচালক মো. ফয়সাল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল আহমেদ।

[বিএফআইইউ-র গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং আইনি ভিত্তি]

এই তদন্ত শুরু করার মূল কারণ হলো বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে পারভেজ তমাল, রাশেদ আহমেদ লিটন ও তাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নাম উঠে আসে। অভিযোগে বলা হয়, তারা সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন।

এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিএসইসি দ্রুত তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের অভিমত, পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই অভিযোগগুলির বিচার বিভাগীয় তদন্ত অতীব প্রয়োজনীয়। এজন্য 'সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯', 'বিএসইসি আইন ১৯৯৩' এবং 'মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২'-এর অধীনে এই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

[নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃঢ় পদক্ষেপ]

অতীতে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত ছিল সীমিত। তবে, রাজনৈতিক পালাবদলের পর পুনর্গঠিত বিএসইসি, চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে, বাজারের শৃঙ্খলা ফেরাতে নজিরবিহীন কঠোরতা অবলম্বন করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় এনআরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এই গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হলো। জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ইতোমধ্যে পারভেজ তমালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এবং তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

[এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচিতি ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা]

উল্লেখ্য, এনআরবিসি ব্যাংক হলো ২০১২ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চতুর্থ প্রজন্মের ৯টি ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম। এই ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে শাসক দল ও জাতীয় পার্টির নেতা এবং প্রবাসে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। চলতি বছরের ১২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে দেয়। পর্ষদ ভাঙার আগ পর্যন্ত এসএম পারভেজ তমাল ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। একই প্রজন্মের অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এইচ. এন. আশিকুর রহমান এবং এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান।

বিএসইসি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই নিবিড় অনুসন্ধানের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটিত হবে। কমিশন মনে করছে, এই তদন্ত শেয়ারবাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করবে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ