ঢাকা, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

অতিরিক্ত মোবাইল স্ক্রলিং: মানসিক বিপর্যয় এড়ানোর জরুরি টিপস

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৫ ১৬:৩০:৪৫
অতিরিক্ত মোবাইল স্ক্রলিং: মানসিক বিপর্যয় এড়ানোর জরুরি টিপস

দৈনন্দিন জীবনের দৌড়ঝাঁপ, পেশাগত চাপ আর হাজারো দায়িত্ব সামলে রাতে যখন বিছানায় আশ্রয় নেওয়া হয়, সেই সময়টুকু হয়ে ওঠে একান্তই নিজস্ব। একসময় অনেকে এই ফুরসতে বই পড়তেন বা সারাদিনের স্মৃতি ডায়েরিতে টুকে রাখতেন। কিন্তু আধুনিক সময়ে এসে সেই অভ্যাসগুলো পাল্টে দিয়েছে হাতে থাকা মোবাইল ফোন। এখন রাতের নিরিবিলি সময়ে অন্ধকার ঘরে স্ক্রল করলেই হাতের মুঠোয় চলে আসছে বিশ্বের নানা খবর, ভাইরাল ভিডিও বা অদ্ভুত সব কনটেন্ট। এই আসক্তি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মন ভালো করার অজুহাতে ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি তীব্র আকর্ষণ নীরবে ডেকে আনছে শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়।

ঘুমের শত্রু: মেলাটোনিনের পথে বাধা

পৃথিবীজুড়ে এখন 'ডিজিটাল ডিটক্স' নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এর অর্থ হলো, মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব-এর মতো ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলির প্রতি তৈরি হওয়া মোহ বা আসক্তিকে ছেঁটে ফেলা। এই পথ নিঃসন্দেহে কঠিন, কারণ অবসর পেলেই অজান্তেই হাতে উঠে আসে ফোন। কিন্তু এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে গেলে বিকল্প কিছু অভ্যাস তৈরি করা জরুরি, যা সহজে মোবাইলের আকর্ষণ কমাতে পারে।

রাতের বেলা শুয়ে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুমের জন্য দায়ী হরমোন মেলাটোনিন-এর স্বাভাবিক ক্ষরণ কমে যায়, যা সরাসরি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আবারও মানুষ মোবাইল স্ক্রলেই চোখ রাখে। এই চক্র ভাঙতে বিকল্প অভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

মোবাইল আসক্তি কমানোর কার্যকরী উপায়:

১. পুরাতন অভ্যাস পুনরুজ্জীবিত করুন: বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব

ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে পছন্দের বইয়ের জগতে ফিরে যাওয়া এক চমৎকার বিকল্প। প্রথম দিকে হয়তো মনোযোগ বসানো কঠিন হবে, তবে টানা কিছুদিন পুরোনো বা নতুন বই হাতে নিলে পড়ার ইচ্ছা আবার জেগে উঠবে। অনলাইনে জামাকাপড় খোঁজার পরিবর্তে নতুন বইয়ের তালিকা দেখা শুরু করুন। এতে শুধু পড়ার ইচ্ছাই বাড়বে না, মস্তিষ্কেরও সতেজতা বজায় থাকবে।

২. স্মৃতির সরণি বেয়ে: ডায়েরি লেখার অভ্যাস

সারা দিনের ছোট ছোট ঘটনা, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় বা নিজের অনুভূতিকে ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ করার অভ্যাস শুরু করুন। এতে একদিকে যেমন আপনার স্মৃতিগুলো সতেজ থাকবে, তেমনই লেখার অভ্যাসও তৈরি হবে। কোনো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে সেই বিষয়ে নিজের উপলব্ধি লিখে রাখলে তা ধীরে ধীরে লেখার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। দু’কথা দিয়ে শুরু করলেও দ্রুতই তা চার কথায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে।

৩. মানসিক স্থিরতার জন্য ধ্যান

মোবাইলের মোহ কাটাতে স্থির হয়ে বসে কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে ধ্যান করার চেষ্টা করা যেতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মন শান্ত রাখতে এই কৌশল কার্যকর। প্রথমদিকে নানা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা মনে এলেও সেগুলোকে প্রশ্রয় না দিয়ে শান্ত থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা বা অন্তত নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া আবশ্যক।

৪. গানের জাদুতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

নিয়মিত গান শুনলে মন ও মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে 'সুখী' হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এর ফলে শুধু শরীর নয়, মনের নানা অসুখও দূরে থাকে। গানের সুরে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস উদ্দীপিত হয় এবং কর্টিসল নামক 'স্ট্রেস হরমোন'-এর ক্ষরণ কমে আসে। ফলে অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা বশে আসে এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চাবিকাঠি মেলে গানের সুরেই।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ