ঢাকা, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

১৫ বছর আগে জাকেরের মত এভাবেই ক্যারিয়ার শেষ হয়েছিলো জুনায়েদ-রাকিবুলের

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৮:৫০:১০
১৫ বছর আগে জাকেরের মত এভাবেই ক্যারিয়ার শেষ হয়েছিলো জুনায়েদ-রাকিবুলের

ড্রেসিং রুমের 'নোংরা গ্রুপিং' সংস্কৃতি কি ফের একবার প্রতিভাবান এক ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে হুমকি? ঠিক এক বছর আগেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার ছিলেন জাকির আলী অনিক। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানেই ঘরের মাঠে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুয়োধ্বনি শুনতে হচ্ছে তাকে। মনে হচ্ছে, ব্যাটটাই যেন ধরতে জানেন না জাকির। এই নাটকীয় পতনের পেছনে একজন মানুষের অবদান নিশ্চিতভাবেই আছে—তিনি হলেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

কোচ সালাউদ্দিনের প্রিয় ছাত্র হওয়ায় জাকিরের কেরিয়ারটাই আদতে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন এই কোচ। ঠিক যে কাজটি করে জাতীয় দলে এর আগের মেয়াদে তিনি জুনায়েদ সিদ্দিকী এবং রকিবুল হাসানদের কেরিয়ার শেষ করে দিয়েছিলেন।

দেড় দশক আগের গ্রুপিংয়ের প্রভাব

এখন থেকে প্রায় দেড় দশক আগে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথমবারের মতো সহকারী কোচ হিসেবে জাতীয় দলের সাথে যুক্ত হন। তখন হেড কোচ ছিলেন জেমি সিডন্স, তবে দলের মূল মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সালাউদ্দিনই।

নিজের পছন্দের শিষ্যদের গুরুত্ব দেবার অভিলাষে প্রায় জোর করেই জুনায়েদ সিদ্দিকী ও রকিবুল হাসানকে সব ফরম্যাটে খেলানো হলো। জুনায়েদ ছিলেন সাদা বলের ক্রিকেটে দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের একজন, আর রকিবুল ছিলেন লাল বলের ক্রিকেটের জন্য একদম পারফেক্ট। তাদের যোগ্যতা ছিল না তা নয়, কিন্তু সব ফরম্যাটে সমান তালে খেলবার মতো ভার্সেটালিটি তখনকার তরুণ জুনায়েদ ও রকিবুলের হয়তো গড়ে ওঠেনি।

কিন্তু সালাউদ্দিনের প্রিয় শিষ্য হওয়ায় ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে, এই দুইজনসহ সালাউদ্দিনের কোরামের সবাই ড্রেসিং রুমে বাড়তি গুরুত্ব পেতে থাকলেন। যার ফলে ড্রেসিংরুমে কয়েকটি ‘কোরাম’ তৈরি হয়ে গেল। এই ঘটনাগুলো যখন ঘটছিল, তখন এসবের আঁচ টের পাওয়া যায়নি খুব একটা। সালাউদ্দিন ২০১০ সালে জাতীয় দল ছাড়লেন। কিন্তু ড্রেসিং রুমের সেই নোংরা গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়লো এরপরই।

দারুণ প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তথাকথিত সালাউদ্দিন কোরামের রকিবুল, জুনায়েদদের আর সুযোগ দেওয়া হলো না জাতীয় দলে। তাদের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ সেখানেই। আর ড্রেসিং রুমের সেই বাজে সংস্কৃতির কারণে ২০১২ সালের পর মাঠের ক্রিকেটেও চরম দুঃসময় পার করে বাংলাদেশ।

১৪ বছর পর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

২০১০ সালের ১৪ বছর পর (২০২৪/২৫) আবারো জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে ফিরে এলেন সালাউদ্দিন। তখনকার সালাউদ্দিনের বদনাম সবাই প্রায় ভুলেই গিয়েছিল এত বছর পরে এসে। কিন্তু কোচ সালাউদ্দিন যেন নিজেই দায়িত্ব নিলেন সেসব নোংরা সংস্কৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার।

বিপিএলে দীর্ঘদিন সালাউদ্দিনের অধীনে খেলায় জাকির ট্যাগ পেয়ে গিয়েছিলেন সালাউদ্দিনের কোরামের খেলোয়াড় হিসেবে। অফসাইডে প্রায় অন্ধ জাকিরকে সব ফরম্যাটের দলে খেলানো দিয়ে শুরু করলেন কোচ। জাকির শুরুতে পারফর্ম করায় সেটা খারাপ কিছু মনে হয়নি কারও কাছেই। কিন্তু আর দশটা খেলোয়াড়ের মতো জাকিরের খারাপ সময় আসতেই, জাকির যেন নিজেই তার টের পেতে শুরু করলেন।

এর মধ্যেই আবার কেরিয়ারে কখনোই অধিনায়কত্ব না করা জাকিরকে এশিয়া কাপের বড় মঞ্চে অধিনায়ক বানিয়ে দিতে কলকাঠি নাড়লেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তাও আবার তখন দলে আছেন সোহানের (নুরুল হাসান সোহান) মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল অধিনায়ক।

এরপর চরম অফ-ফর্মে থাকা জাকিরকে খেলাতে রীতিমতো যা নয় তাই শুরু করলেন তিনি। অন্যরা এখন সবাই চাক্ষুষ সাক্ষী হচ্ছেন, ১৫ বছর পেরিয়ে এসেও দারুণ প্রতিভাবান এক ঝাঁক ক্রিকেটারের কেরিয়ারটাই সালাউদ্দিন শেষ করে দিলেন শুধু নিজের কোরাম পলিটিক্স ঠিক রাখতে গিয়ে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ