ঢাকা, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

নীরব ঘাতক কিডনি রোগ: ৮টি জরুরি লক্ষণ, যা জানা আবশ্যক

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১৩:০৪:০৬
নীরব ঘাতক কিডনি রোগ: ৮টি জরুরি লক্ষণ, যা জানা আবশ্যক

আমাদের দেহের ভেতরের অসুস্থতা প্রায়শই সহজে শনাক্ত করা যায় না। বৃক্ক বা কিডনির ক্ষেত্রে এই জটিলতা আরও বেশি। এই অঙ্গটির সমস্যা অনেক দেরিতে প্রকাশ্যে আসে বলেই একে 'নীরব ঘাতক' উপাধি দেওয়া হয়েছে। বিকল হওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এটি কার্যত কোনো বড় সংকেত ছাড়াই কাজ চালিয়ে যায়। চুপিসারে এই ব্যাধি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে মারাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।

কিডনির ভূমিকা কেন অত্যন্ত জরুরি?

কিডনি দেহের অভ্যন্তরে একটি ছাঁকনির (Filter) মূল কাজটি করে থাকে—রক্তকে পরিশুদ্ধ করা, ক্ষতিকারক টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেওয়া। পাশাপাশি, এটি দেহের খনিজ লবণ ও জলের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনেও সাহায্য করে। কিন্তু কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম হলে, শরীর আগেভাগেই কিছু জরুরি সতর্কসংকেত দিতে শুরু করে। আপনার কিডনি সুস্থ আছে কি না, তা বোঝার জন্য জরুরি সেই ৮টি লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো:

কিডনি ভালো না থাকার ৮টি প্রাথমিক সংকেত

১. বিরামহীন দুর্বলতা ও ক্লান্তি

যদি কিডনি রক্ত পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে করতে না পারে, তবে শরীরে বিষাক্ত টক্সিন উপাদান জমতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ ব্যক্তি সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করেন, মাথা ভারী লাগে এবং কোনো কাজে মন বসাতে পারেন না। অনেক সময় রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) তৈরি হওয়ার কারণেও এই দুর্বলতা দেখা দেয়।

২. নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত

টক্সিন উপাদানগুলো কিডনি দ্বারা পরিশ্রুত না হয়ে রক্তপ্রবাহে থেকে যাওয়ার কারণে ঘুমের স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটে এবং নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। শারীরিক স্থূলতা এবং ঘুমের অনিয়ম, উভয়ই দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের নির্দেশক হতে পারে।

৩. রুক্ষতা ও ত্বকের শুষ্কতা

কিডনি আমাদের দেহের খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং হাড়ের মজবুত গঠনে ভূমিকা রাখে। যখন এই ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটে, তখন ত্বক রুক্ষ হয়ে ওঠে, শুষ্ক লাগে এবং অনেক ক্ষেত্রে ফাটতে শুরু করে। এটি কিডনি রোগের অ্যাডভান্স পর্যায়ের পূর্বাভাস হতে পারে।

৪. ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ (বিশেষত রাতে)

বিশেষত রাতের বেলায় যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বারবার প্রস্রাবের জন্য উঠতে হয়, তবে তা কিডনি রোগের একটি চিহ্ন হতে পারে। কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টারিং ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে এমনটা ঘটে। তবে মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউরিন ইনফেকশন) অথবা প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধিও এর কারণ হতে পারে।

৫. মূত্রের সাথে রক্তপাত

একটি সুস্থ কিডনি রক্তে থাকা রক্তকণিকাকে দেহের ভেতরেই ধরে রাখে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই রক্তকণিকাগুলি মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এটি যেমন কিডনি রোগের লক্ষণ, তেমনই টিউমার, কিডনি পাথর বা সংক্রমণের কারণেও ঘটতে পারে।

৬. মূত্রে অতিরিক্ত ফেনা

প্রস্রাবের মধ্যে যদি ডিমের সাদা অংশের মতো অতিরিক্ত ফেনা বা বুদবুদ দেখা যায়, তবে বোঝা যায় প্রোটিন লিক হচ্ছে। এর মানে হলো কিডনির ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত এবং শরীরের অপরিহার্য প্রোটিন মূত্রের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

৭. চোখের চারপাশ ফুলে ওঠা

চোখের নিচে বা চারপাশে হঠাৎ ফোলা ভাব দেখা দিলে বুঝতে হবে, অধিক পরিমাণে প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যাচ্ছে এবং কিডনি সেই লিক বন্ধ করতে পারছে না।

৮. পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া

কিডনির দুর্বলতার কারণে শরীরে সোডিয়াম জমে গিয়ে জল ধরে রাখে। এর ফলস্বরূপ পা এবং গোড়ালি ফুলে ওঠে। তবে এই লক্ষণটি হৃদরোগ, লিভার সংক্রান্ত জটিলতা অথবা পায়ের শিরার দীর্ঘমেয়াদি রোগের ফলেও হতে পারে।

দ্রুত পদক্ষেপ নিন: কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

যদি নিজের বা পরিচিত কারও মধ্যে উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর এক বা একাধিকটি চোখে পড়ে, তবে আর দেরি না করে অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। সাধারণ কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি প্রাথমিক অবস্থাতেই চিহ্নিত করা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে—ব্লাড টেস্ট (Creatinine, Urea), ইউরিন টেস্ট (Protein, RBC) এবং আলট্রাসনোগ্রাম।

কিডনি রোগ শুরুতে নীরব থাকলেও, একবার মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছালে তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই সময়মতো এই সংকেতগুলো চিনে নেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোই হলো সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি। শরীরের ইশারাগুলোকে গুরুত্ব দিন এবং সুস্থ থাকুন।

FAQ (Frequently Asked Questions) ও উত্তর

১. কিডনি রোগকে 'নীরব ঘাতক' বলার কারণ কী?

উত্তর: কিডনি রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয় কারণ এটি বিকল হওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো নোটিশ না দিয়েই কাজ চালিয়ে যায় এবং সমস্যার মূল লক্ষণগুলো ধরা পড়ে অনেক দেরিতে।

২. শরীরে কিডনি কী ধরনের কাজ করে?

উত্তর: কিডনি শরীরের ভেতরে এক ধরনের ফিল্টার হিসেবে কাজ করে—রক্ত পরিশোধন করে, টক্সিন বা বর্জ্য বাইরে বের করে, লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং রক্ত তৈরি করতেও সাহায্য করে।

৩. প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা দেখা দিলে কী বোঝা যায়?

উত্তর: যদি প্রস্রাবে ডিমের সাদা অংশের মতো অতিরিক্ত ফেনা বা বাবল হয়, তবে বোঝা যায় প্রোটিন লিক হচ্ছে। এর মানে কিডনির ছাঁকনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় প্রোটিন শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

৪. কিডনি রোগের প্রাথমিক সন্দেহ হলে কী কী পরীক্ষা করা দরকার?

উত্তর: এই ধরনের লক্ষণ দেখলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো উচিত। সাধারণ কয়েকটি পরীক্ষা যেমন—ব্লাড টেস্ট (Creatinine, Urea), ইউরিন টেস্ট (Protein, RBC) এবং আলট্রাসনোগ্রাম করালেই অনেক কিছু বোঝা যায়।

আমিনুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

সেনাবাহিনীসতর্কবার্তা: জারি করল সতর্কতা

সেনাবাহিনীসতর্কবার্তা: জারি করল সতর্কতা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে লক্ষ্য করে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত নানা অসত্য ও ভিত্তিহীন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।... বিস্তারিত