ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, কার্যকর হবে কবে থেকে?

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ২০ ১০:৩৮:১৩
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, কার্যকর হবে কবে থেকে?

দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজ এক যুগান্তকারী রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনকারী সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া ১৪ বছর আগের রায়টি নাকচ করে দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা ভবিষ্যতে সক্রিয় ও কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল এবং পুনর্বিবেচনার আবেদনগুলো আজ বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে মঞ্জুর করে এই রায় প্রদান করা হয়। আদালতের অভিমত, আপিল বিভাগের পুরোনো রায়টি "একাধিক ত্রুটিতে সুস্পষ্টভাবে ত্রুটিপূর্ণ" বলে প্রতীয়মান হয়েছে এবং সেটিকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করা হলো।

নির্দলীয় সরকারের বিধান সক্রিয়

রায়ের বিষয়ে আপিল বিভাগ বলেন, সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছদ ২ (ক)-এ অন্তর্ভুক্ত নির্দলীয় সরকার–সংক্রান্ত বিধানাবলি, যা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনের ৩ ধারার মাধ্যমে সন্নিবেশিত হয়েছিল—বর্তমান রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তা পুনরুজ্জীবিত এবং সক্রিয় বলে গণ্য হলো।

তবে সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দেন যে নির্দলীয় সরকার–সম্পর্কিত এই বিধানাবলি কেবল "ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতে" কার্যকর হবে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এই রায় প্রদান করেন। বেঞ্চের অপর ছয় সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

আইনগত পটভূমি

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যান্য ব্যক্তি একটি রিট আবেদন দাখিল করার মাধ্যমে এই সাংবিধানিক বিতর্কের সূচনা হয়। এর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ রায় দেন এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ বলে ঘোষণা করেন, যার ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল থাকে।

কিন্তু হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে রিট আবেদনকারীপক্ষ আপিল করে। সেই আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪: ৩) ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেন।

এরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়।

স্মর্তব্য যে, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনসমূহ সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অবশ্য, এরও আগে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে গঠিত একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। সেটির প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, যিনি প্রধান বিচারপতির পদ ত্যাগ করে সাময়িকভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

FAQ

প্রশ্ন ১: দেশের সর্বোচ্চ আদালত কোন রায়টি বাতিল ঘোষণা করেছেন?

উত্তর: সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়টি বাতিল ঘোষণা করেছেন।

প্রশ্ন ২: নতুন রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার কী হবে?

উত্তর: নতুন রায়ের ফলে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছদ ২ (ক)-এর নির্দলীয় সরকার–সম্পর্কিত বিধানবলি (ত্রয়োদশ সংশোধনীতে সন্নিবেশিত) পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩: নির্দলীয় সরকার–সম্পর্কিত বিধানবলি কখন থেকে কার্যকর হবে?

উত্তর: নির্দলীয় সরকার–সম্পর্কিত বিধানবলি কেবল ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: কোন আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায়টি দিয়েছেন?

উত্তর: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এই সর্বসম্মত রায়টি দিয়েছেন।

প্রশ্ন ৫: এর আগে কোন রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল?

উত্তর: তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১০ মে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ