ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

উল্টে যাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু, সূর্য উঠবে পশ্চিমে

২০২৪ নভেম্বর ২৮ ২২:০০:২৫
উল্টে যাচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু, সূর্য উঠবে পশ্চিমে

গবেষকরা সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা পৃথিবী এবং মানবজাতির ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করতে পারে—পৃথিবীর চৌম্বক মেরু উল্টানো। যদিও এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, তবে এর ফলাফল হতে পারে বিপর্যয়কর এবং মানবজাতির জন্য মারাত্মক।

পৃথিবীর চারপাশে একটি অদৃশ্য চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্র সূর্যের রশ্মিকে দূরে ঠেলে দিয়ে আমাদের জীবনের জন্য একটি সুরক্ষা বলয়ের কাজ করে। পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘোরে, ফলে পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা গলিত লোহা ঘুরে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। কিন্তু পৃথিবীর চৌম্বক মেরু নিয়মিত পরিবর্তিত হয় এবং প্রতিটি পরিবর্তন কিছু সময় পর পর ঘটে।

গবেষকদের মতে, প্রায় প্রতি দুই থেকে তিন লক্ষ বছরে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু সম্পূর্ণভাবে উল্টে যায়। যখন এমনটি ঘটে, পৃথিবী ও প্রাণীকুলের জন্য এটি এক ভয়ানক ঘটনা হতে পারে, যা পৃথিবীর প্রাণীকুলের বিরাট অংশ বিলুপ্ত করে ফেলে—একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যার নাম দেওয়া হয় 'ম্যাস এক্সটিংশন'। এর কারণ হচ্ছে, চৌম্বক ক্ষেত্রের দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে পৃথিবীকে রক্ষা করা সূর্যের তীব্র রশ্মি ও মহাকাশের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই রশ্মিগুলো প্রাণীদের মৃত্যু ঘটাতে পারে।

সর্বশেষ চৌম্বক মেরু উল্টে গিয়েছিল প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার বছর আগে। তবে, বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১৯৮০ সাল থেকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল হতে শুরু করেছে। বিশেষত, সাউথ আটলান্টিক এনাম নামে একটি অঞ্চলে চৌম্বক ক্ষেত্র প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে, যা পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ অংশ জুড়ে বিস্তৃত। এই দুর্বলতার কারণে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চৌম্বক মেরু উল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এটি ঘটলে, পৃথিবীর যা উত্তর মেরু হিসেবে পরিচিত, তা হবে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সূর্য উঠবে পশ্চিমে—একটি অবিশ্বাস্য দৃশ্য। এই পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী এবং মানবজাতির জন্য বিপুল ঝুঁকি তৈরি হবে।

যেহেতু চৌম্বক ক্ষেত্র দুর্বল হয়ে যাবে, তাই এটি মানবজাতির জন্য এক নতুন বিপদ নিয়ে আসবে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে ক্যান্সারের প্রকোপ বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর পাশাপাশি, ভূমিকম্প, ভূমিধস এবং অগ্নুৎপাতের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে।

এছাড়া, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, সার্কিট, বিদ্যুৎ গ্রিড এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্যাটেলাইট, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট—কোনো কিছুই কাজ করবে না। মানবজাতি সম্ভবত ফিরে যাবে অন্ধকার যুগে, যেখানে প্রাচীন প্রযুক্তির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

কিছু মুসলিম আলেমও এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, পশ্চিম থেকে সূর্য ওঠার ঘটনা হাদীসে বর্ণিত কেয়ামতের পূর্বে ঘটবে, যা এই চৌম্বক মেরুর উল্টানোর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

যতই বিজ্ঞান এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করুক, পৃথিবীর চৌম্বক মেরুর উল্টানো একটি বড় বিপদ হিসেবে সামনে চলে আসছে। তবে, বর্তমান গবেষণায় কিছু পরিস্কার সমাধান পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টি মানবজাতির জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হতে পারে, যেটি অদূর ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে