ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে বড় পরিবর্তনের আভাস, বিনিয়োগে ফিরছে আস্থা

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১২ ১৫:৫৫:২১
শেয়ারবাজারে বড় পরিবর্তনের আভাস, বিনিয়োগে ফিরছে আস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে নতুন করে আশাবাদের আলো ফুটতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিশ্চয়তা ও মন্দার ধাক্কা সামলাতে থাকা বাজারটি যেন এখন নতুন এক গন্তব্যের খোঁজে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংস্কার পরিকল্পনা, আসন্ন বাজেটে বাজারবান্ধব প্রণোদনা এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের মিলিত প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে।

উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বড় পাঁচ দিকনির্দেশনা

গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে শেয়ারবাজার সংস্কারে একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে গৃহীত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো:

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি।

সম্ভাবনাময় দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে কর-প্রণোদনার মাধ্যমে বাজারমুখী করা।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তিন মাসের মধ্যে কার্যকর সংস্কার সম্পন্ন করা।

দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া।

বড় কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহিত করা।

বৈঠকে ইউনিলিভারসহ মোবাইল অপারেটরগুলোকে তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব উঠে আসে, যা বাজারের গভীরতা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত ও অনালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে ১০ শতাংশ ব্যবধান পুনর্বহালের চিন্তাও গুরুত্ব পায়।

বাজেট ঘিরে শেয়ারবাজারবান্ধব বার্তা

আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজারকে ঘিরে নীতিগত ও কর সংক্রান্ত বেশ কিছু সহায়তা আসছে বলে আভাস মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে—

বিনিয়োগে কর রেয়াত বাড়ানো

নতুন কোম্পানির জন্য করছাড়

তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার কমানো

বড় মোবাইল অপারেটরদের পুঁজিবাজারমুখী করতে কর কাঠামোয় পরিবর্তন

এই পদক্ষেপগুলো বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

আঞ্চলিক শান্তির প্রভাব: বাড়ছে আস্থা

দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছে। কূটনৈতিকভাবে এটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের বাজারে আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে এবং বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় উৎসাহ পাবেন।

ডিএসইর চলমান চিত্র: ধীরে ধীরে ফিরছে চাঞ্চল্য

সোমবার (১২ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ১৯.২৭ পয়েন্ট বেড়ে ৪,৯২১ পয়েন্টে পৌঁছেছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক বেড়েছে ১.৬২ পয়েন্ট, এখন অবস্থান করছে ১,০৭৫ পয়েন্টে। তবে ডিএসই-৩০ সূচক কিছুটা কমে ১,৮১৫ পয়েন্টে নেমেছে।

লেনদেনের পরিমাণে দেখা গেছে সামান্য ভাটা—৩৬৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, আগের দিন যা ছিল ৩৬৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। আজ ডিএসইতে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৯টির, কমেছে ১৬০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৬টির।

সিএসইতে কিছুটা স্থবিরতা

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার, যা আগের দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম (২১ কোটি ৬১ লাখ টাকা)। এখানে ১৮২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ৭১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২০টি।

সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯.১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩,৭২৩ পয়েন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।

সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিনিয়োগ বাজার

সরকারের বাস্তবভিত্তিক সংস্কার পদক্ষেপ, আসন্ন বাজেটের সম্ভাব্য প্রণোদনা এবং কূটনৈতিক অগ্রগতি মিলিয়ে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখন একটি পরিবর্তনের মুখে। বিনিয়োগকারীদের আস্থার ফিরে আসা এবং বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা দীর্ঘদিনের সংকট কাটিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

FAQ বিভাগ (প্রশ্নোত্তর সহ):

প্রশ্ন ১: শেয়ারবাজারে কী ধরনের সংস্কার আসছে?

উত্তর: সরকার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি, কর-প্রণোদনা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়ে বাজার সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ২: এই সংস্কার বিনিয়োগকারীদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে?

উত্তর: বাজারে স্থিতিশীলতা ও আস্থা বাড়বে, বড় কোম্পানির অংশগ্রহণে লেনদেন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

প্রশ্ন ৩: বাজেটে শেয়ারবাজারকে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে?

উত্তর: করছাড়, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার হ্রাস এবং নতুন কোম্পানির জন্য কর রেয়াতের প্রস্তাব থাকছে।

প্রশ্ন ৪: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রভাব কী হতে পারে?

উত্তর: আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়লে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পুঁজিবাজারে আস্থা বাড়বে ও ঝুঁকি কমবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ