ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বাজারে সিন্ডিকেটের দখলদারি? বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১২ ১৬:৩৫:১৭
বাজারে সিন্ডিকেটের দখলদারি? বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার যেন এক রহস্যময় নাট্যমঞ্চ। যেখানে সামনে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও পর্দার আড়ালে চলছে অদৃশ্য এক খেলা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যখন আশাবাদের জোয়ার বইছে, তখনই একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী বাজারে ছড়াচ্ছে কৃত্রিম চাপ, নেমে যাচ্ছে সূচক, কমছে শেয়ারের দাম—যদিও লেনদেনে নেই কোনো ঘাটতি!

লেনদেন বাড়ছে, তবু দর নিচের দিকে—এর মানে কী?

সোমবার (১২ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ৩৬৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। শীর্ষ তিন কোম্পানি—এনআরবি ব্যাংক, বীচ হ্যাচারি ও বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার—এই তিনটিতেই লেনদেন হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার, যা দিনের মোট লেনদেনের প্রায় ১৪ শতাংশ। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো—এই বৃহৎ লেনদেন সত্ত্বেও কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমেছে।

বিশ্লেষকদের ভাষায়, এত বড় লেনদেনের পরও দরপতন একটি অস্বাভাবিক ও গভীর সংকেত। এর মানে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারকে নিচের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে।

“বড় অঙ্কের লেনদেন হচ্ছে, কিন্তু দাম বাড়ছে না। বরং কমছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে বাজারে কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে,” — বললেন এক জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক।

সেল প্রেসার: আতঙ্ক ছড়ানো না কি পরিকল্পিত চাল?

বাজার-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী সচেতনভাবেই বাজারের উত্থান ঠেকাতে শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। উদ্দেশ্য—বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ঢুকিয়ে পুঁজির প্রবাহ থামানো এবং সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কারধর্মী পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।

কারা এই অদৃশ্য খেলোয়াড়?

বিশ্লেষকদের মতে, এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যারা ছোট সময়ের মধ্যে লাভ তুলতেই ব্যস্ত।

অতীতে বাজারে অনিয়মে জড়িত প্রভাবশালী গ্রুপ, যারা এখনো সিন্ডিকেট চক্রে সক্রিয়।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত কিছু মহল, যারা বাজারকে ব্যবহার করতে চায় সরকারের সাফল্য ম্লান করার হাতিয়ার হিসেবে।

তারা শুধু শেয়ারদরে নয়, বাজার মনস্তত্ত্বে আঘাত করছে—যার ফল ভোগ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

নিয়ন্ত্রণে করণীয়: ঘুম ভাঙাতে হবে নিয়ন্ত্রকদের

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গোপন সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে এখনই দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিএসইসিকে হতে হবে আরও সক্রিয়, আরও কৌশলী। কী করা উচিত—

লেনদেন বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা।

ম্যানিপুলেটিভ ট্রেডিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে জরুরি তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

বিনিয়োগকারী সচেতনতায় প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রবাহ জোরদার করা।

বাজেটে বাজারবান্ধব প্রণোদনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

আস্থা ফিরিয়ে আনতে চিহ্নিত করতে হবে ছায়া-চক্রকে

দেশের শেয়ারবাজার এক সময় ছিল ধ্বংসস্তূপের সমান। বর্তমান কমিশনের নানা উদ্যোগে সে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই অদৃশ্য ‘সিন্ডিকেট’ চক্র সেই অগ্রযাত্রায় লাগাম টানছে। সময় এসেছে মুখোশ খুলে দেওয়ার, যেন বাজার ফের স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতায় ফিরতে পারে।

বিনিয়োগকারীরা চায় একটি নিরপেক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক বাজার। আর সেটা তখনই সম্ভব, যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা সাহসিকতার সঙ্গে বলবে—"সিন্ডিকেটের খেলায় আর নয়!"

FAQ (সচরাচর জিজ্ঞাসা ও উত্তর):

প্রশ্ন ১: শেয়ারবাজারে দরপতনের পেছনে কারা থাকতে পারে?

উত্তর: বিশ্লেষকদের মতে, কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত মহল দরপতনের জন্য দায়ী।

প্রশ্ন ২: বড় লেনদেনের মধ্যেও দাম কমে যাচ্ছে কেন?

উত্তর: এটি একটি পরিকল্পিত ‘সেল প্রেসার’ বা চাপ তৈরি করে সূচককে নিচে নামানোর কৌশল, যা বাজারে বিভ্রান্তি তৈরি করে।

প্রশ্ন ৩: এই সিন্ডিকেট ঠেকাতে কী করণীয়?

উত্তর: বিএসইসিকে কঠোর মনিটরিং, তদন্ত ও বিনিয়োগকারী শিক্ষার উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ