ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

বিনিয়োগকারীরা হতাশ, শেয়ারবাজারে ফের বড় পতন!

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৩ ১৫:৫৮:৪৩
বিনিয়োগকারীরা হতাশ, শেয়ারবাজারে ফের বড় পতন!

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে ফের বড় ধস দেখা দিয়েছে। একদিন আগে বিনিয়োগকারীদের চোখেমুখে যে আশার ঝিলিক ছিল, মঙ্গলবার (১৩ মে) তা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে হতাশার ভারে। ডিএসইর সূচক পতন ঘটেছে প্রায় ৪৭ পয়েন্টে, আর লেনদেন কমেছে ২০ কোটি টাকার বেশি। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও একই রকম চিত্র—সূচক ও লেনদেন দুইই নিচের দিকে।

বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান এবং বাজার সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।

❝বৈঠকে আশার আলো, বাস্তবে শুধুই অন্ধকার❞

রবিবার ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত শেয়ারবাজারসংক্রান্ত বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ সরকারের শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকরা। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল—এই বৈঠক থেকেই আসবে বাস্তবভিত্তিক কোনো ঘোষণা, বাড়বে তারল্য, ফিরবে আস্থা।

ফলে বৈঠকের আগের দিন সূচকে দেখা যায় ১০০ পয়েন্টের আশাব্যঞ্জক উত্থান। কিন্তু বাস্তবে কোনো আর্থিক প্রণোদনা বা কাঙ্ক্ষিত নীতিগত সিদ্ধান্ত না আসায় বিনিয়োগকারীদের সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়।

সূচক পতন, লেনদেন কম

মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে সামান্য উত্থান দেখা দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূচকে নামে ধস।

ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৬.৯৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪,৮৭৪ পয়েন্টে।

ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমে ১২.১৯ পয়েন্ট এবং

ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১৬.৭৬ পয়েন্ট।

আজকের লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৩৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকায়, যেখানে আগের দিন ছিল ৩৬৪ কোটি ৯ লাখ টাকা।

ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে—

দর বেড়েছে ৫৪টির

কমেছে ৩০৯টির

অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির শেয়ার দর।

চট্টগ্রামেও একই চিত্র

সিএসইর সার্বিক সূচক (CASPI) ৩৬.৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩,৬৮৬ পয়েন্টে।

লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আগের দিন যা ছিল ৭ কোটি ২৯ লাখ।

সিএসইতে আজ দর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার।

বিনিয়োগকারীদের কণ্ঠে হতাশার সুর

মতিঝিলের এক ব্রোকারেজ হাউজে গিয়ে দেখা যায়, হতাশায় ডুবেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

একজন মধ্যবয়সী বিনিয়োগকারী বললেন—

“বাজার নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম, আজ বুঝলাম সেটা ছিল মরিচিকা।”

তরুণ বিনিয়োগকারী আবদুর রহমান বলেন—

“রাশেদ মাকসুদ শেয়ারবাজারটা শেষ করে দিলেন। অর্থ উপদেষ্টা কেন তাকে এখনও ধরে রেখেছেন, তা আমাদের মাথায় ঢোকে না।”

আরেকজন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন—

“বক্তৃতা দিয়ে লাভ কী? পুঁজি তো প্রতিদিন গলছে!”

বিশ্লেষকদের চোখে বাজার

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন—বর্তমানে শেয়ারবাজার এক ধরনের ‘দিকহীনতা’ বা নেতৃত্বহীনতার মধ্যে রয়েছে। বৈঠকে কোনো বাস্তবায়নযোগ্য রূপরেখা না আসায় বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না, আবার যাঁদের শেয়ার আছে, তারাও পড়েছেন বিপাকে।

শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতে এখন প্রয়োজন আর্থিক প্রণোদনা, সুস্পষ্ট রূপরেখা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার পুনর্গঠন। বক্তৃতা নয়, বিনিয়োগকারীরা এখন বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চায়।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ