ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারের এই অবস্থার জন্য দায়ী যে বিষয়গুলো

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৫ ২০:০২:৫৯
শেয়ারবাজারের এই অবস্থার জন্য দায়ী যে বিষয়গুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্লেষণ বলছে—দীর্ঘদিনের গাফিলতি ও আস্থার সংকটই মূল কারণ

দেশের শেয়ারবাজারে সম্প্রতি নজিরবিহীন দরপতন ঘটেছে। গত ১৫ মে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ নেমে এসেছে ৪,৭৮১ পয়েন্টে, যা গত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। লেনদেনও নেমেছে মাত্র ২৯৬ কোটি টাকায়। প্রশ্ন উঠছে—এমন বিপর্যয়ের জন্য কে বা কারা দায়ী? বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে কয়েকটি মূল কারণ:

নীতিনির্ধারকদের নিষ্ক্রিয়তা ও সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া

বাজারে যখন পতনের ধারা শুরু হয়, তখন তা সামাল দিতে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ দরকার হয়। কিন্তু বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিএসইসি) ভূমিকা অনেক সময়েই প্রতিক্রিয়াশীল, আগাম প্রস্তুতিমূলক নয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তেও দেখা গেছে বিলম্ব।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনুপস্থিতি

বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের সক্রিয়তা নেই বললেই চলে। ব্যাংক, বিমা বা ফান্ডগুলো প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না করায় বাজারে অতিরিক্ত ভোলাটিলিটি তৈরি হচ্ছে।

আস্থার সংকট ও নীতির অস্থিরতা

বারবার নীতিমালার পরিবর্তন, লভ্যাংশ নীতির বিতর্ক, ফ্লোর প্রাইসের মতো অস্বাভাবিক হস্তক্ষেপ—এসবের ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দোটানায় পড়ছেন। স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতির অভাব আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় বাধা।

বাজার থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হচ্ছে, প্রবাহ বাড়ছে না

মার্কেটপ্লেস হিসেবে শেয়ারবাজারের ভূমিকা হওয়া উচিত মূলধন সংগ্রহ ও পুনর্বিনিয়োগে সহায়ক হওয়া। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—অনেক কোম্পানি বাজার থেকে অর্থ তুলে নিয়ে যাচ্ছে, বিনিময়ে ভালো পারফরম্যান্স বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে

যেসব কোম্পানি নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় না বা নিঃলাভ থাকে, সেগুলো বাজারে থাকলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা হতাশ হন। অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত থেকেও কার্যত নিষ্ক্রিয়—এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আস্থা আরও কমে গেছে।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান সংকট হঠাৎ করে আসেনি; এটি দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা, নীতিগত অস্থিরতা এবং নিয়ন্ত্রণহীনতার ফল। এখনই যদি আস্থার পরিবেশ গড়ে না তোলা যায়, তবে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা আরও গভীর হবে।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এমন দরপতনের কারণ কী?

উত্তর: প্রধান কারণগুলো হল নীতিনির্ধারকদের সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনুপস্থিতি, ও বাজারে আস্থার ঘাটতি।

প্রশ্ন ২: বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কেন কমেছে?

উত্তর: ঘনঘন নীতিমালা পরিবর্তন, ফ্লোর প্রাইসের মতো কৃত্রিম হস্তক্ষেপ এবং কোম্পানিগুলোর দুর্বল পারফরম্যান্স আস্থা কমিয়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন ৩: লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলো কি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে?

উত্তর: হ্যাঁ, এসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায় এবং বাজারে দীর্ঘমেয়াদি আকর্ষণ কমিয়ে দেয়।

প্রশ্ন ৪: এখন কি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত?

উত্তর: বাজারে ঝুঁকি বেশি, তবে সঠিক বিশ্লেষণ ও মৌলভিত্তির ভিত্তিতে বাছাই করে বিনিয়োগ করলে সম্ভাবনা রয়েছে।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ