ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী, ইউনুস রাষ্ট্রপতি? জাতীয় সরকারে নতুন হিসাব

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৬ ২৩:৩৪:৪৭
তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী, ইউনুস রাষ্ট্রপতি? জাতীয় সরকারে নতুন হিসাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনীতির দাবার বোর্ডে আবারও নড়েচড়ে উঠেছে গুটি। শুরু হয়েছে নতুন এক খেলা—যার প্রত্যক্ষ ঘোষণা না থাকলেও পরোক্ষ ইঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্প্রতি এক আলোচনায় উত্থাপিত হয় একটি বিস্ফোরক প্রস্তাব, যেখানে ভবিষ্যতের সরকার কাঠামো ও নেতৃত্ব সম্পর্কে বিশদভাবে ধারণা দেওয়া হয়।

বিস্ময়কর প্রস্তাবনায় কারা কোথায়?

প্রস্তাব অনুযায়ী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হবেন জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী। তার ডানহাতে থাকবেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, যিনি উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন। রাষ্ট্রপতির আসনে বসানো হবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে। উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব সামলাবেন সুশাসন আন্দোলনের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ড. বদিউল আলম মজুমদার।

অনুপাতে দায়িত্ব ভাগ, নেই মন্ত্রী পদ

ঘোষিত খসড়া অনুযায়ী, সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দলভিত্তিক ক্ষমতা বণ্টন হবে আনুপাতিক হারে। সেখানে দেখা যাচ্ছে,

বিএনপি পাবে ২৫%

জামায়াতে ইসলামি ২০%

এনসিপি ১৫%

ইসলামী আন্দোলন ৫%

বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (যেমন ইউনুস, বদিউল আলম মজুমদার) ১০%

বাকি দলসমূহ ২৫%

বিশেষ দিকটি হলো—এই সরকারে কোনো মন্ত্রী থাকবেন না। সবাই হবেন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী। মূল ক্ষমতা থাকবে উপদেষ্টাদের হাতে এবং রাষ্ট্রপতির অধীনে চলবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী নীতি নির্ধারকদের ছায়াতলে থেকে কাজ করবেন, যা বর্তমান সংবিধান কাঠামো থেকে এক বড় ধরনের বিচ্যুতি।

ভূরাজনীতির টানাপোড়েন ও ইউনুস বিতর্ক

জাতীয় সরকার গঠনের এই প্রস্তাবে সবচেয়ে বিতর্কিত ও তাৎপর্যপূর্ণ নাম ড. মুহাম্মদ ইউনুস। পশ্চিমা দেশগুলো তাকে গণতন্ত্র ও সুশাসনের সম্ভাব্য প্রতীক হিসেবে দেখলেও, ভারতের কূটনৈতিক পরিসরে তিনি এক ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ চরিত্র। তাকে রাষ্ট্রপতি বানানো হলে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক—দুয়ের দিকেই নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনুসের রাষ্ট্রপতি হওয়া মানে হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য এক নতুন দুঃস্বপ্ন। কারণ, এতে করে মোদি-বান্ধব ঢাকা রূপান্তরিত হবে মোদি-বিরোধী নীতির দিকে।

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি ও অজানা ভবিষ্যৎ

জাতীয় সরকার গঠনের আলোচনার ছায়ায় থেকে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করা এই নেত্রীর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগ জাতীয় সরকারে কীভাবে অংশ নেবে, আদৌ অংশ নেবে কিনা—তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

জাতীয় সরকার নাকি গোপন চুক্তিপত্র?

রাজনীতির এই অদৃশ্য রূপরেখা জনমনে যেমন আশার সঞ্চার করছে, তেমনি তৈরি করছে দুশ্চিন্তার ছায়া। নির্বাচনের আগেই যদি ক্ষমতা ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়, তবে তা কতটা বৈধ ও গণতান্ত্রিক? কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় সরকার আসলে একটি রাজনৈতিক জোটের মুখোশ পরা একচেটিয়া চুক্তিপত্র—যা জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বদলে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগির মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশ এখন এক নতুন রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক মেরুকরণের এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে—এই সরকার কি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, নাকি হবে নতুন এক ষড়যন্ত্রের দরজা? উত্তর সময়ই দেবে, তবে রাজনৈতিক হাওয়ায় ইতোমধ্যেই ভারী হয়ে উঠেছে এক নতুন অধ্যায়ের ঘ্রাণ।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

Q1: জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবে কারা নেতৃত্বে থাকছেন?

A: তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী, ড. ইউনুস রাষ্ট্রপতি এবং জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান উপপ্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব উঠেছে।

Q2: এই সরকারে দলগুলোর ক্ষমতার বণ্টন কেমন হবে?

A: প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুযায়ী বিএনপি ২৫%, জামায়াত ২০%, এনসিপি ১৫%, ইসলামী আন্দোলন ৫%, বিশেষ ব্যক্তি ১০%, অন্যান্য দল ২৫% অংশ পাবে।

Q3: আওয়ামী লীগের অবস্থান কোথায় থাকবে জাতীয় সরকারে?

A: আলোচনায় আওয়ামী লীগের অবস্থান অনির্দিষ্ট, যা প্রশ্ন ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

তথ্যসূত্র: Ekushey TV youtube channel

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ