ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এক এক করে বন্ধ হচ্ছে ভিসা, বিপাকে বাংলাদেশিরা

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৯ ১৭:৫৫:০৩
এক এক করে বন্ধ হচ্ছে ভিসা, বিপাকে বাংলাদেশিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাসপোর্টে সিল পড়বে, ব্যাগে গুটিকয়েক পোশাক, আর হাতে ট্রাভেল গাইড—স্বপ্ন ছিল পৃথিবী ঘোরার। কিন্তু আজ বাংলাদেশি ভ্রমণপিপাসুরা দাঁড়িয়ে আছেন অনিশ্চয়তার এক মোড়ে। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভিসার দরজা। চিকিৎসা, অবকাশ, কিংবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশে পা রাখার স্বপ্নটা যেন দিনে দিনে আরও ঝাপসা হয়ে আসছে।

ভারতের পথে তালা, থাইল্যান্ডে দীর্ঘ অপেক্ষা

এক সময় প্রতিবেশী ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া ছিল অনেকটা ডালভাত। বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য অনেকেই ভরসা করতেন কলকাতার হাসপাতালগুলোকে। কিন্তু এখন সেই পথও বন্ধ—চলতি বছরের জুলাই থেকে ভারত কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসা।

যারা বিকল্প খুঁজে নিয়েছিলেন থাইল্যান্ডে, তারাও হতাশ। পাতায়ার সৈকত কিংবা ব্যাংককের আলো-ঝলমলে রাত—সবই রয়ে গেছে কেবল কল্পনায়। এখন দেশটিতে ভিসা পেতে সময় লাগছে কমপক্ষে ৪৫ দিন, আগে যা ছিল এক-দুই সপ্তাহ।

মরু শহরের স্বপ্নও মরুঝড়ের মতো উড়ে যাচ্ছে

দুবাই ছিল এক সময়ের স্বপ্নের শহর। বুর্জ খলিফার নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল অনেক বাংলাদেশির। কিন্তু সেই স্বপ্নে এখন ধুলো পড়েছে। গত জুলাই থেকে দুবাই কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ভিসা। দিনে হাতে গোনা কিছু ভিসা দেওয়া হচ্ছে, তবে তা বিজনেস কিংবা স্পেশাল ক্যাটাগরির জন্য—সাধারণ পর্যটক সেখানে জায়গা পাচ্ছেন না।

বন্ধ হয়ে গেল ভিয়েতনামের জানালাও

এক সময়কার সস্তা ও সহজ ভ্রমণ গন্তব্য ভিয়েতনাম। যেখান থেকে অনেকে ঘুরে আসতেন লাওস ও কম্বোডিয়াও। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশিদের জন্য সে দরজাটিও একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি।

অপেক্ষা আর অপেক্ষা: ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন

‘অন-অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা এক সময় ইন্দোনেশিয়ার বড় আকর্ষণ ছিল। এখন সেটিও অতীত। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য সেই ভিসা পেতে এখন সময় লাগছে দুই মাসেরও বেশি। ফিলিপাইনেও একই দশা—আগে যেখানে দশ দিনের মধ্যে ভিসা মিলত, এখন সেটা দেড় মাসের প্রক্রিয়া।

ভিসা বন্ধের আসল গল্প

এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে একটি করুণ বাস্তবতা—ট্যুরিস্ট ভিসার অপব্যবহার। অনেকেই বৈধ ভিসা নিয়ে বিদেশ গিয়ে আর ফেরেন না। থেকে যান অবৈধ অভিবাসী হয়ে, ঢুকে পড়েন শ্রমবাজারে। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কঠোর হচ্ছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলেই বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে।

পরিণতি: শুধুই বন্ধ দরজা নয়, ভাঙা স্বপ্ন

একসময় বছরে এক-দুবার ঘুরে আসার পরিকল্পনা করা যেত অনায়াসে। হানিমুন, ছুটির মৌসুম, পারিবারিক ভ্রমণ—সবই ছিল সহজলভ্য। এখন সেই পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রথমেই প্রশ্ন আসে: কোথায় যাওয়া যাবে?

আশার আলো কী কোথাও আছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন দরকার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, বাংলাদেশের ইমেজ পুনর্গঠন এবং ভিসার অপব্যবহার রোধে কঠোর পদক্ষেপ। না হলে ধীরে ধীরে আরও দেশ বন্ধ করে দেবে তাদের দরজা, আর বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট হয়ে উঠবে কেবল একখণ্ড কাগজ, যার মানচিত্র থাকবে, গন্তব্য থাকবে না।

বিশ্ব এক সময় ছিল উন্মুক্ত, এখন সীমান্ত হয়ে উঠছে অদৃশ্য প্রাচীর। ঘুরতে চাওয়া মানুষেরা আজ বন্দি হয়ে আছেন ‘প্রতীক্ষা’র ভিসা অফিসে। বাংলাদেশিদের জন্য এখন দরকার আত্মসমীক্ষা—আমরা কী শুধু পর্যটক, নাকি নিজেরাই নিজের দরজা বন্ধ করার কারণ?

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ