ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফু-ওয়াং ফুডসের ‘ফুড চেইন’ এ অনিয়ম, তদন্তে বিএসইসির বিশেষ কমিটি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ৩০ ১৫:৪৩:২২
ফু-ওয়াং ফুডসের ‘ফুড চেইন’ এ অনিয়ম, তদন্তে বিএসইসির বিশেষ কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্যপণ্যের ব্যবসায় নাম থাকলেও হিসাবের খাতায় নেই স্বচ্ছতা—এমনই চিত্র উঠে এসেছে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানির বিরুদ্ধে অসংগতি ও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি গত ১৭ মে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যাদের কাজ কোম্পানির আর্থিক অনিয়মের গোড়ায় পৌঁছানো। কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই কমিটিতে রয়েছেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান, উপপরিচালক মো. শাহনেওয়াজ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডেপুটি ম্যানেজার বদরুল ইসলাম। তাঁরা শুধু কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনই নয়, খতিয়ে দেখবেন কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম, নগদপ্রবাহ, সম্পদ ও দায়, শেয়ারহোল্ডারদের মূলধন এবং আন্তর্জাতিক হিসাব মানদণ্ড (IAS, IFRS, ISA)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা।

তদন্তকারীরা যাচাই করবেন কোম্পানির কারখানা, যন্ত্রপাতি, জমি, ভবনসহ সব ধরনের স্থাবর সম্পদের মালিকানা ও প্রকৃত অস্তিত্ব। কারণ, এসব খাতে বড় অনিয়মের ইঙ্গিত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

টানা দুই অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি ফু-ওয়াং ফুডস। সর্বশেষ ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মাত্র ০.৫০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। অন্যদিকে ২০২৫ সালের মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৩ পয়সায়, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।

কেবল আর্থিক প্রতিবেদন নয়, কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা নিয়েও রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুনের বিরুদ্ধে উঠেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ।

২০১৭ সালে এমারেল্ড অয়েল অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে ফু-ওয়াং ফুডস। এরপর ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি জাপানি কোম্পানি মিনোরি বাংলাদেশ অধিগ্রহণ করে কোম্পানিটির ৭.৬১ শতাংশ শেয়ার। কিন্তু মালিকানা পরিবর্তনও কোম্পানিকে উদ্ধার করতে পারেনি আর্থিক মন্দা থেকে। বরং বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী ৩০ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে নতুন কর্তৃপক্ষ।

২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফু-ওয়াং ফুডস বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা, মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে মাত্র ৭.৮৫ শতাংশ শেয়ার, বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৮২.৫৭ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ফু-ওয়াং ফুডসের অনিয়মের তদন্ত শুধু একটি কোম্পানির নয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর বড় পদক্ষেপ হতে পারে। তদন্তের ফল নির্ধারণ করবে কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ এবং বাজারে এর প্রভাব কতদূর বিস্তৃত হবে।

একসময় ‘ফুড ব্র্যান্ড’ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল যে কোম্পানি, আজ সেই প্রতিষ্ঠানই আর্থিক রিপোর্টে ‘অখাদ্য’ অনিয়মের দায়ে তদন্তের মুখে। বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষায়—আসছে ৬০ দিনের তদন্তে উঠে আসবে কি তাদের প্রশ্নের জবাব?

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ