ঢাকা, সোমবার, ২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশের অর্থনীতির বাঁকবদল

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ৩১ ১১:১৫:৪৬
বাংলাদেশের অর্থনীতির বাঁকবদল

চীনা প্রতিনিধিদলের ঐতিহাসিক সফর ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নানামুখী সংকটে ক্লান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির আকাশে হঠাৎই যেন এক ফালি রোদ ঝলমলে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপে হাঁসফাঁস করা সাধারণ মানুষ, বিনিয়োগ খরায় হতাশ উদ্যোক্তারা আর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দিশেহারা নীতিনির্ধারকদের মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও’র ঢাকা সফর।

এটা কেবল আরেকটি আনুষ্ঠানিক সফর নয়—এটি হয়ে উঠতে পারে অর্থনীতির রূপান্তরের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ, সঙ্গে আসছেন ১০০ চীনা ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। দুজন করে সহকর্মী নিয়ে তাঁদের প্রতিনিধিদলের আকার দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২০০ জনে। বাংলাদেশে এটিই প্রথম এত বড় বিদেশি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের আগমন—যা সরকারের উচ্চপর্যায়ে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে।

চলতি অর্থবছরে রপ্তানি ও রেমিটেন্স কিছুটা আশার আলো দেখালেও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও ব্যাংক খাতের অবস্থা উদ্বেগজনক। এর মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর চাপ বাড়ছে—বিদেশি বিনিয়োগ না টানতে পারলে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়া অবশ্যম্ভাবী।

এমন সময় চীনের এমন উচ্চপর্যায়ের সফর অনেক কিছুই পাল্টে দিতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ এবং যৌথ বিনিয়োগ সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে এই সফরের মাধ্যমে।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছাবেন ওয়াং ওয়েনতাও ও তাঁর বিশাল বহর। বিকেলে বৈঠকে বসবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে। পরদিন রোববার পাঁচটি আলাদা সেশনে চীনা প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসবে ‘ম্যাচমেকিং’ আলোচনায়। সেখানেই উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-চীন যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিশনের বহুল প্রত্যাশিত বৈঠক। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আর চীনের পক্ষে ওয়াং ওয়েনতাও। পাশাপাশি, ওইদিন গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীনা ব্যবসায়ীরা গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানাও ঘুরে দেখবেন।

সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো যৌথ কমিশনের মাধ্যমে পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে যেকোনো বাধা দূর করা। আমরা কিছু বিনিয়োগ ঘোষণার আশা করছি—যদিও পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না।”

অর্থনীতিবিদরাও আশাবাদী। তবে তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, গ্যাস সংকট, কর কাঠামোর জটিলতা, প্রশাসনিক দৌড়ঝাঁপ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর না করলে বিদেশি বিনিয়োগ স্থায়ী হবে না। একইসঙ্গে মার্কিন ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবস্থাপনায় কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মাধ্যমে গঠন করা হবে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ—যা বাণিজ্য সহজীকরণের রূপরেখা তৈরি করবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির এই সন্ধিক্ষণে চীনা প্রতিনিধি দলের সফর যেন মরুর বুকে জলধারার মতোই প্রাণ জোগাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই সফর থেকে কী বাস্তব অর্জন আসে, এবং সেটি কতটা দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতে তোলপাড়

শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতে তোলপাড়

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সরাসরি সম্প্রচারিত বিচারকাজ নজির গড়ল বাংলাদেশে নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হলো একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর... বিস্তারিত