ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরাতে বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ জানালো বিএসইসি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৩ ২০:৩১:৪০
শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরাতে বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ জানালো বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থনীতির দুর্যোগময় অধ্যায় পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এই পুনরুদ্ধারের পথচলায় শেয়ারবাজারকে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরের প্রত্যয় নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে "ভবিষ্যতমুখী ও বিনিয়োগবান্ধব" আখ্যা দিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালামের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (৩ জুন) এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

রাশেদ মাকসুদ বলেন, “জুলাই-পরবর্তী অভ্যুত্থানে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার সাহসিকতার সঙ্গে বাজেট প্রণয়ন করেছে। এই বাজেট শুধু পরিসংখ্যানের তালিকা নয়, বরং এটি একটি দিকনির্দেশনামূলক দলিল, যার মাধ্যমে অর্থনীতির হারানো আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।”

তিনি মনে করেন, এই বাজেটে শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও প্রবৃদ্ধিমুখী করতে বেশ কিছু দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন—শেয়ারবাজারে বহুজাতিক ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন দেশীয় কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করা, বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ জোরদারে কঠোর উদ্যোগ, এবং শেয়ারবাজারকে অর্থনৈতিক ইঞ্জিন হিসেবে গড়ে তোলার নীতিগত অঙ্গীকার।

একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন—তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা। তার ভাষায়, “এটি দেশের ও বিদেশের গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে বাজারে আসার জন্য দৃঢ় প্রণোদনা দেবে।”

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লেনদেনে উৎসে কর ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০৩% করাকে তারল্য বাড়ানোর যুগোপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। একইসঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর করহার ৩৭.৫% থেকে কমিয়ে ২৭.৫% করায় তাদের শেয়ারবাজারে সক্রিয় অংশগ্রহণ আরও বেগবান হবে বলেও মত দেন।

ক্যাপিটাল গেইন কর ৩০% থেকে কমিয়ে ১৫% করার সিদ্ধান্তকে তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য “প্রাণ জোগানোর মতো স্বস্তির বার্তা” হিসেবে অভিহিত করেন।

বিনিয়োগকারীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় বিএসইসি বিও অ্যাকাউন্টের বার্ষিক ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় স্বস্তি হয়ে এসেছে। একইসঙ্গে সুদের ২৫% ‘ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে’ জমার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা ভবিষ্যতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কার্যকর হবে বলে মনে করছেন তিনি।

বক্তব্যের শেষভাগে রাশেদ মাকসুদ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীদের বহুদিনের দাবি ছিল—এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয়ে কর মওকুফ করা হোক। সরকার তা বিবেচনায় এনেছে। তবে এক লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ১৫% চূড়ান্ত কর প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি, যেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও স্বস্তির পরিবেশ বজায় থাকে।”

শেয়ারবাজার উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে—এটি যেন বাজেট বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের গল্প হয়ে ওঠে, সেই প্রত্যাশাই রাখছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ