বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ নিরাপদ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। প্রায়শই আলোচনায় আসে ব্যাংকে তারল্য সংকট, বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ, আর্থিক অনিয়ম কিংবা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। এরই প্রেক্ষাপটে অনেকেই প্রশ্ন করছেন—আমার কষ্টার্জিত টাকা কোন ব্যাংকে রাখলে তা নিরাপদ থাকবে?
বিশ্লেষকদের মতে, একটি ব্যাংককে ‘নিরাপদ’ বলার পেছনে কয়েকটি মূল সূচক কাজ করে—স্থায়ী মুনাফা অর্জন, কম খেলাপি ঋণ, শক্তিশালী মূলধন কাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, রেগুলেটরি মান রক্ষা এবং স্বচ্ছতা। এসব সূচকের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ১০টি ব্যাংকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা থেকে একজন সচেতন গ্রাহক সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন ব্যাংকে সঞ্চয় রাখা নিরাপদ।
১. স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
দেশের অন্যতম প্রাচীন বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বছরের পর বছর ধরে স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আসছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি ৩৩০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি। শক্তিশালী মূলধন কাঠামো, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরিচালিত হওয়ায় এই ব্যাংক এখনো দেশের সবচেয়ে নিরাপদ ব্যাংক হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
২. ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
ডাচ-বাংলা ব্যাংক দেশের প্রথম প্রযুক্তিনির্ভর বেসরকারি ব্যাংক। এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং বিপ্লবের অগ্রদূত। ব্যাংকটি ২০২৪ সালেও শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম, ই-কমার্স পেমেন্ট এবং নিরাপদ লেনদেনে আস্থার নাম এই ব্যাংকটি। উচ্চ মুনাফা এবং গ্রাহকসেবায় আধুনিকতার কারণে এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
৩. ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড
বিকাশের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৭৩ শতাংশ, যা ব্যাংকটির পরিচালন দক্ষতা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রমাণ। প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা এবং গতিশীল ব্যবস্থাপনার কারণে ব্র্যাক ব্যাংক এখন দেশের অন্যতম নিরাপদ আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
৪. ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)
ইবিএল ২০২৪ সালে ৬৬০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা এবং বিনিয়োগ আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকটির অবস্থান চতুর্থ। ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছতা ও দৃষ্টান্তমূলক কাস্টমার সার্ভিস বজায় রেখে আসছে।
৫. পুবালি ব্যাংক লিমিটেড
রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি ধারাবাহিক সংস্কারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনেছে মাত্র ২.৬৭ শতাংশে। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদাহরণ। সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি এনে ব্যাংকটি আমানতকারীদের আস্থার জায়গা তৈরি করেছে।
৬. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
বিতর্ক পেরিয়ে এখনো দেশের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংক এগিয়ে আছে। ব্যাংকটির অবকাঠামোগত শক্তি, আন্তর্জাতিক লেনদেন সক্ষমতা এবং ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের আধুনিক মডেল অনুসরণের কারণে এটি টিকে আছে দেশের নিরাপদ ব্যাংকের তালিকায়।
৭. সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক সোনালী ব্যাংক ধীরে ধীরে মুনাফার ধারায় ফিরছে। বিভিন্ন দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়ে ব্যাংকটি গোটা ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে সংস্কারের ফলে এর অবস্থান ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে।
৮. সিটি ব্যাংক পিএলসি
সিটি ব্যাংক ২০২৪ সালে আর্থিক স্থিতিশীলতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় নিজের জায়গা তৈরি করেছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সেবা, ইনোভেশন ও ফিনটেক সহযোগিতায় অগ্রগামী এই ব্যাংক অনেক বিনিয়োগকারীর প্রথম পছন্দ।
৯. প্রাইম ব্যাংক পিএলসি
২০২৪ সালে ৭০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রাইম ব্যাংক। ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা এবং মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (CAR) ১৮.২৬ শতাংশে উন্নীত হওয়ায় ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের কাছে আস্থা অর্জন করেছে। ব্যাংকটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা কাঠামো যথেষ্ট দৃঢ়।
১০. উত্তরা ব্যাংক পিএলসি
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তরা ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকটি দীর্ঘ সময় ধরে মুনাফা এবং সুনাম ধরে রেখেছে। ২০২৪ সালে ৪৭৮ কোটি টাকা মুনাফা এবং ৩০.৭৫ শতাংশ আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকটির স্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালী ব্যবস্থাপনার প্রমাণ।
যদিও দেশের ব্যাংকিং খাত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারপরও এই তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলো এখনো গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা, সেবা মান ও আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলছে।
সঞ্চয় রাখার আগে শুধু সুদের হার নয়, ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা, নীতিগত স্বচ্ছতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। নিরাপদ ব্যাংক বেছে নেওয়ার মধ্যেই ভবিষ্যতের নিশ্চিন্ততার বীজ রোপণ হয়।
আল-আমিন ইসলাম/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের দিনক্ষণ ঘোষণা
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: প্রথম টেস্ট প্রথম দিনেই বাংলাদেশ ৪ রেকর্ড
- মারা গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোস্তফা মোহসীন মন্টু
- শান্ত বিদায়, বিসিবির চমক—ওয়ানডে অধিনায়ক মিরাজ!
- তাণ্ডব একদিনেই আয় ৫ কোটি+, ৭ দিনে আয়ের ইতিহাস গড়লেন শাকিব
- বাংলাদেশে আজ ১ ভেরি ১৮, ২১ ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- বিসিবিতে প্রধান কোচ হয়ে ফিরলেন হান্নান সরকার
- মারা গেলেন ভারতের উদিয়মান তারকা ক্রিকেটার
- ক্যান্সারে আক্রান্ত আবদুল হামিদের রাজনৈতিক আক্ষেপ ও ভবিষ্যতের বার্তা
- ৬০ কোম্পানির কাছে মূলধন রোডম্যাপ চাইল বিএসইসি
- সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা: নাম প্রকাশ
- আকাশে ভাসা স্বপ্ন ভেঙে গেল ‘Mayday’ সংকেতে, কী ছিল ক্যাপ্টেনের শেষ বার্তা?
- “নিষিদ্ধ নয়, বিচারই প্রাধান্য—আ.লীগ প্রসঙ্গে স্পষ্ট ড. ইউনূস”
- সমর্থকদের রোষে রেফারি ও স্ত্রী, পেনাল্টি বঞ্চনায় তুঙ্গে ক্ষোভ
- আজকের সৌদি রিয়াল রেট (১৪ জুন ২০২৫)