ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ইতালিতে ৫ লাখ কর্মী নিয়োগ, নিয়মিত পথে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ২২:১৫:০৭
ইতালিতে ৫ লাখ কর্মী নিয়োগ, নিয়মিত পথে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি তাদের শ্রমবাজারে বড় ধরনের নিয়োগ ঘোষণা করেছে। আগামী তিন বছরে দেশটি ৫ লাখ নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে—আর এ সুযোগের সুবিধা পেতে পারেন বাংলাদেশিরাও।

দেশটির শ্রমঘাটতি পূরণ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালির সরকার। মন্ত্রিসভার এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে কর্মী নেওয়া হবে বিভিন্ন খাতে।

জনসংখ্যা সংকটে ইতালি, দরকার বিদেশি কর্মী

ইতালির জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে মৃত্যুর চেয়ে জন্ম প্রায় ২ লাখ ৮১ হাজার কম। এতে জনসংখ্যা নেমে এসেছে ৫ কোটি ৮০ লাখে।

এই প্রবণতা রোধে এবং অর্থনীতি সচল রাখতে দেশটির সরকার বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার রোডম্যাপ তৈরি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন সরকার জানায়, ২০২৬ সালে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০ জন, এরপর ২০২৮ সালের মধ্যে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জন কর্মী নেওয়া হবে।

অভিবাসনের জন্য নিয়মিত পথেই জোর

ইতালি সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, এই কর্মসূচি শুধুমাত্র নিয়মিত অভিবাসনপথ ধরেই বাস্তবায়ন করা হবে।অবৈধ অভিবাসন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। ইতোমধ্যে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনবিরোধী অভিযান, এনজিও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে রোম।

বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

এই বিশাল নিয়োগ পরিকল্পনার মধ্যেই নতুন করে আশার আলো দেখছেন বাংলাদেশিরা। কারণ, চলতি বছরের মে মাসে ঢাকায় সফরে এসে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারকে (MoU) সই করেন।

এই সমঝোতার আওতায়—

নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি

সিজনাল ও নন-সিজনাল খাতে নিয়োগ

কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ভাষা শিক্ষা

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন

নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিতকরণ

প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা হলো প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী পাঠানো। ইতালির ভাষা শেখানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”

ঢাকা সফরে আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের সঙ্গে এই সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিতে আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকায় আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।

এই সফর হবে স্বল্প সময়ের, তবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর মধ্য দিয়ে অভিবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিয়ান্তেদোসি বলেছেন, “ইতালিতে বাংলাদেশি কমিউনিটি অত্যন্ত সফল ও পরিশ্রমী। আমরা তাদের আরও চাচ্ছি। তবে সেটা যেন নিয়মিত, নিরাপদ পথে হয়।”

প্রস্তুতি নিন এখন থেকেই

এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশি কর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে—

কারিগরি দক্ষতা

ইতালীয় ভাষাজ্ঞান

বৈধ ভিসা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ

সরকারি অনুমোদিত রিক্রুটিং চ্যানেল ব্যবহার

ইতালির শ্রমবাজার এখন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পথে নয়, নিয়মিত পথে দক্ষতা ও সততার সঙ্গে এগোলে ইউরোপের মাটিতে গড়া যেতে পারে নিরাপদ ও সম্মানজনক ভবিষ্যৎ।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

প্রশ্ন: ইতালিতে বাংলাদেশিরা কীভাবে নিয়মিত পথে যেতে পারবেন?

উত্তর: বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় নির্ধারিত প্রশিক্ষণ ও ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে সরকারি অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ মিলবে।

প্রশ্ন: কখন থেকে কর্মী নেওয়া শুরু হবে?

উত্তর: ২০২৬ সাল থেকে শুরু করে ২০২৮ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে মোট ৫ লাখ বিদেশি কর্মী নেওয়া হবে।

প্রশ্ন: কোন খাতে নিয়োগ দেওয়া হবে?

উত্তর: মূলত কৃষি, নির্মাণ, পরিবহন, রেস্টুরেন্ট ও হসপিটালিটি খাতে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রশ্ন: কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?

উত্তর: ইতালীয় ভাষা শেখা, কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ, সরকারি অনুমোদিত চ্যানেলের মাধ্যমে আবেদন এবং প্রতারকদের থেকে দূরে থাকা জরুরি।

প্রশ্ন: অনিয়মিত পথে গেলে কী হবে?

উত্তর: ইতালি এখন অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর। বৈধ পথে না গেলে আটক, ফেরত পাঠানো বা শাস্তির মুখোমুখি হতে হতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ