ঢাকা, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য আসছে আইনি কাঠামোযুক্ত তহবিল

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১১:২২:০৫
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য আসছে আইনি কাঠামোযুক্ত তহবিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অধিকার রক্ষা এবং অবণ্টিত ডিভিডেন্ড ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)-কে একটি সংবিধিবদ্ধ তহবিলে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ফলে তহবিলটির আইনগত ভিত্তি দৃঢ় হবে এবং পরিচালনা কাঠামো হবে আরও নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত।

সিএমএসএফ গঠিত হয় ২০২১ সালের জুন মাসে, পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত ও অমীমাংসিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণের উদ্দেশ্যে। তবে শুরু থেকেই ফান্ডটির আইনি কাঠামো ছিল সীমিত, যার ফলে কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন পর্যায়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।

আইনি ভিত্তি শক্তিশালী হচ্ছে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে

সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিএসইসি ও এফআইডি-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সিএমএসএফ-এর আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বৈঠকে এ প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির প্রস্তুতি চলছে, যা কার্যকর হলে তহবিলের কার্যক্রম আইনি সুরক্ষা পাবে।

ডিভিডেন্ড ব্যবস্থাপনায় আসছে শৃঙ্খলা

নতুন কাঠামোর আওতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিতরণ প্রক্রিয়া সিএমএসএফ-এর মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে। এর ফলে ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর কর সংগ্রহ, কর ছাড় প্রদান এবং রেকর্ড সংরক্ষণ সহজ ও সংগঠিত হবে।

এছাড়া, দীর্ঘদিন দাবিহীন থাকা অবণ্টিত ডিভিডেন্ডের অর্থ ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজতর হবে। বর্তমানে অনেক ইস্যুকারী কোম্পানি অবণ্টিত ডিভিডেন্ড নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছে, যার পরিমাণ কয়েক দশক ধরে বেড়ে প্রায় ৪০ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। সিএমএসএফ-এর আইনি কাঠামো দৃঢ় হলে এসব অর্থ ফান্ডে স্থানান্তরে কোম্পানিগুলোর বাধ্যবাধকতা কার্যকর হবে।

সরকারি কোষাগারে অর্থ স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ সিএমএসএফ-এর অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ সরকারি কোষাগারে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিএসইসি ও এফআইডি যৌথভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে। তারা স্পষ্ট করে জানায়, এই তহবিলে থাকা অর্থ বিনিয়োগকারীদের এবং তাদের উত্তরসূরিরা বৈধভাবে তা দাবি করার অধিকার রাখে। ফলে এ অর্থ সরকারের দখলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বিনিয়োগ কার্যক্রমে পরিবর্তন আসছে

সিএমএসএফ অতীতে আইসিবি এএমসিএল-এর মাধ্যমে একটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিল, যা পরে সমালোচনার মুখে পড়ে। নতুন কাঠামোর আওতায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ দিয়ে পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের সরাসরি বিনিয়োগ বা ফান্ড পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করা হবে।

এছাড়া, অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশে অবস্থিত স্টকে বিনিয়োগ করা অবণ্টিত ডিভিডেন্ড পাঠানোর উদ্যোগও বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না পাওয়ায়। কারণ হিসেবে সিএমএসএফ-এর দুর্বল আইনগত অবস্থা দেখানো হয়।

সিএমএসএফ-এর সংবিধিবদ্ধ কাঠামোয় রূপান্তর বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। আইনি ভিত্তি শক্তিশালী হলে অবণ্টিত ডিভিডেন্ড সংগ্রহ, কর ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগকারীর অর্থ সুরক্ষার প্রক্রিয়া আরও নির্ভরযোগ্য হবে। পাশাপাশি এটি বাজারে দীর্ঘমেয়াদে আস্থার পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ