এক নজরে এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ অর্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৮ আগস্ট ২০২৪— বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ওইদিনই শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এক টালমাটাল সময়ে। বছর ঘুরে আবার সেই ৮ আগস্ট আসছে— কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।
গণতন্ত্রের সংকটকালে দায়িত্ব নিয়ে এই সরকার কী অর্জন করেছে? ঠিক এক বছর পূর্তির প্রাক্কালে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক অনন্য ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন সরকারের ১২টি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
শান্তি ও স্থিতিশীলতা থেকে শুরু করে অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইনি সংস্কার কিংবা গণমাধ্যম স্বাধীনতা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ইতিবাচক পালাবদলের চিত্র। এসব অর্জন শুধু পরিসংখ্যানে সীমাবদ্ধ নয়, অনেকটা জাতির মানসিক ভূচিত্রেও রেখেছে আশার রেখা।
১. শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাবর্তন
জুলাইয়ের অস্থিরতা ও সহিংসতার পর দেশ যে রক্তাক্ত বিভাজনে আটকে গিয়েছিল, সেই অচলাবস্থা ভেঙে এনে দেওয়া হয়েছে এক শীতল বাতাসের মতো স্থিতিশীলতা। প্রতিশোধ নয়, পুনর্মিলনের পথে হাঁটার নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. ইউনূস। তার নৈতিক দৃঢ়তা এবং জনআস্থায় গড়া শাসন কাঠামো দেশের রাজনীতিতে নতুন সৌজন্যবোধ ফিরিয়ে এনেছে।
২. অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো
খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে, যা সাধারণ মানুষের বাজার অভিজ্ঞতাতেও লক্ষণীয়। সমগ্র মুদ্রাস্ফীতি ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স, রফতানিতে ৯% প্রবৃদ্ধি, এবং টাকার মানে স্থিতি এসেছে। ব্যাংক খাতও ফিরে পেয়েছে ভারসাম্য। এক কথায়— অর্থনীতি আবার হাঁটছে নিজ পায়ে।
৩. বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের নবযাত্রা
বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন— দুর্বল সরকার কখনো বড় মাপের বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে পারবে না। কিন্তু সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে হান্ডা গ্রুপের মতো কোম্পানি ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এনেছে, তৈরি করেছে ২৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শুল্ক আলোচনাও সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিগুণ হয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ।
৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার ও ‘জুলাই সনদ’
যেখানে গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খেয়েছে, সেখানে এই সরকার গড়ে তুলেছে জাতীয় ঐকমত্য। গঠিত হয়েছে সংস্কার কমিশন। চূড়ান্ত করা হয়েছে ‘জুলাই সনদ’— যা ভবিষ্যতের যেকোনো কর্তৃত্ববাদী বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে হবে একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধব্যবস্থা। এর মধ্য দিয়েই সূচনা হয়েছে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’-ভিত্তিক এক নতুন রাজনৈতিক যুগের।
৫. জুলাই গণহত্যার বিচারে অগ্রগতি
শুধু ক্ষমতা নয়, ন্যায়ের প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে সরকার। মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি বড় ট্রায়াল শুরু হয়েছে। বিচারের কাঠগড়ায় এসেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও। জবাবদিহির এই সংস্কৃতি মানুষকে দিয়েছে এক নতুন আস্থা।
৬. নির্বাচনি রোডম্যাপ ও ডিজিটাল গণশুনানি
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী এবং নারী ভোটারদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। চালু হয়েছে ডিজিটাল পরামর্শ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নাগরিকেরা সরাসরি মতামত দিতে পারছেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে প্রস্তুত প্রায় ৮ লাখ নিরাপত্তা সদস্য। এই উদ্যোগ একটি “গণতন্ত্রের উৎসব”-এ রূপ নিচ্ছে।
৭. আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সাহসী পদক্ষেপ
বিচার বিভাগ: স্বাধীনভাবে গঠিত নিয়োগ পদ্ধতিতে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত।
পুলিশ সংস্কার: বডিক্যাম, মানবাধিকার সেল, এবং ইউএন মানসম্পন্ন বিক্ষোভ প্রোটোকল চালু।
আইনি সংস্কার: গ্রেফতারের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানানো বাধ্যতামূলক, অনলাইন জিডি চালু এবং চিকিৎসা ও আইনজীবী সহায়তা নিশ্চিত।
৮. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল অধিকার
দমনমূলক সাইবার আইন বাতিল করে সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা। প্রথমবারের মতো, ইন্টারনেট ব্যবহারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
৯. পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য ও মর্যাদা
একক নির্ভরতার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে বহুমুখী কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইইউসহ বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে বাণিজ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বেড়েছে। সক্রিয় হয়েছে সার্ক, এবং আসিয়ান সদস্যপদের জন্য শুরু হয়েছে কৌশলগত প্রচেষ্টা।
১০. প্রবাসী ও শ্রম বাজারে নবদিগন্ত
আমিরাতের ভিসা চালু হয়েছে পুনরায়, মালয়েশিয়ায় মিলছে মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা। জাপানে ১ লাখ তরুণ, ইতালি, কোরিয়া ও সার্বিয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনিবন্ধিত শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে উপসাগরীয় অঞ্চলে।
১১. যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের পাশে সরকার
৭৭৫ শহীদ পরিবারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা। ১৩ হাজার ৮০০ জন আহত যোদ্ধা পেয়েছেন ১৫৩ কোটি টাকা সহায়তা। গুরুতর আহতদের পাঠানো হয়েছে বিদেশে উন্নত চিকিৎসায়। এটি ছিল কৃতজ্ঞ জাতির সম্মান জানানো।
১২. সামুদ্রিক সম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়ন
বঙ্গোপসাগরকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘জল-ভিত্তিক অর্থনীতির’ মূল জাতীয় সম্পদ। চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২২৫ ছাড়িয়েছে। উপকূল উন্নয়নের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রের শিল্পে বৈশ্বিক বিনিয়োগের দ্বার খুলে গেছে।
এই অর্জনগুলো কেবল একটি সরকারের সাফল্য নয়, বরং একটি জাতির আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার গল্প। শান্তি, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি ভিন্ন রকমের শাসনের নমুনা দেখিয়েছে— যা কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের পথও দেখাচ্ছে।
প্রেস সচিবের ভাষায়—
“আমরা শুধুই প্রশাসন চালাইনি, আমরা একটি বিভক্ত জাতিকে একত্র করার চেষ্টা করেছি— এই এক বছর তার প্রমাণ।”
আল-আমিন ইসলাম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- চলছে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ: লাইভ দেখুন এখানে
- চলছে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ: ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, লাইভ দেখুন এখানে
- বড় খবর! সাকিবসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির তদন্ত নতুন মোড়
- চলছে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ: লাইভ দেখুন এখানে
- ব্যালন ডি'অর ২০২৫: কখন, কোথায় ও কিভাবে দেখবেন, জানুন সব কিছু
- বোর্ড সভার তারিখ জানাল তিন কোম্পানি, আসছে ডিভিডেন্ড
- এশিয়া কাপ ২০২৫ সুপার ফোর পয়েন্ট টেবিল: জানুন বাংলাদেশের অবস্থান
- আজ রাতে ব্যালন ডি'অর ২০২৫ ঘোষণা: বাংলাদেশ থেকে কখন, কোথায় ও কিভাবে দেখবেন
- কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ: লাইভ দেখবেন যেভাবে
- সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লো, জানুন কোন কোন গ্রেডে কত টাকা বাড়লো
- ভারত বনাম পাকিস্তান: টস শেষ, লাইভ দেখুন এখানে
- চলছে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ: টস শেষ একাদশে ২ পরিবর্তন, লাইভ দেখুন এখানে
- স্টেট ডিফেন্স: 'শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, দেশ ছাড়তে বাধ্য হন'- নতুন মোড়!
- বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতেয়ে যত টাকা পুরস্কার পেলেন হৃদয় ও সাইফ
- শেষ মুহুর্তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের একাদশে এক পরিবর্তন