ঢাকা, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলে গেছেন যে আমলের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ জান্নাতে যাবে

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১৩:৫২:১৫
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলে গেছেন যে আমলের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ জান্নাতে যাবে

ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সদাচরণের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছে। পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের অসংখ্য বর্ণনায় মুমিনদের জন্য উত্তম চরিত্রকে ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর শিক্ষা ও কর্মের মাধ্যমে সুন্দর আচরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং তাঁর উম্মতদেরও এর প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এই সংবাদ নিবন্ধে, আমরা জান্নাতে প্রবেশের প্রধানতম কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম, উত্তম চরিত্র ও সুন্দর আচরণের গভীর তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব, যা হাদিসের আলোকে উদ্ভাসিত।

উত্তম আচরণ: মুমিনের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড

একজন মুসলমানের শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণে তার আচার-ব্যবহার এক মৌলিক ভূমিকা পালন করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে মানুষের সাথে আচরণের দিক থেকে উত্তম।" (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯, সহিহ মুসলিম: ২৩২১) এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে, বাহ্যিক ইবাদতের পাশাপাশি মানুষের প্রতি ভালো ব্যবহারই প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। নবিজি (সা.) নিজেও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, যেমনটি অন্য এক হাদিসে এসেছে: "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যার আচরণ ভালো।" (সহিহ বুখারি: ৩৭৫৯)

উত্তম আচরণের অলৌকিক প্রতিদান

ইসলামে উত্তম আচরণের প্রতিদান এতটাই ব্যাপক যে, তা মুমিনকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, "নিশ্চয়ই একজন মুমিন তার সুন্দর আচরণের দ্বারা দিনের বেলায় রোজা পালনকারী এবং রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে।" (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৮) এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, উত্তম আচরণ কেবল একটি সামাজিক গুণ নয়, বরং এটি এমন একটি আমল যা কঠোর শারীরিক ইবাদতের সমতুল্য সওয়াব বহন করে।

পারিবারিক জীবনে উত্তম আচরণ: ঈমানের পূর্ণতা

ঈমানের পূর্ণতা অর্জনে উত্তম আচরণের ভূমিকা অপরিহার্য, বিশেষত পরিবার ও পরিজনের সাথে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে পূর্ণ ঈমানের অধিকারী, যার চরিত্র সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম চরিত্রের অধিকারী, যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে।" (সুনানে তিরমিজি: ১১৬২) একইভাবে, হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং পরিবারের প্রতি সদ্ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা পূর্ণ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।" (সুনানে তিরমিজি: ২৬১২) এই হাদিসগুলো পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে এবং স্ত্রীর প্রতি সদয় হতে উৎসাহিত করে, যা মুমিনের ঈমানের গভীরতা প্রকাশ করে।

জান্নাতের সর্বোচ্চ সোপানে উত্তম চরিত্রের অধিকারীগণ

আখেরাতে উত্তম চরিত্রের জন্য রয়েছে অকল্পনীয় পুরস্কার। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, "কোন আমল সবচেয়ে বেশি মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে?" তিনি উত্তরে বললেন, "আল্লাহভীতি এবং উত্তম আচরণ।" এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, "কোন আমল সবচেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে?" তিনি বললেন, "মুখ (এর অপব্যবহার) এবং লজ্জাস্থান (এর গুনাহ)।" (সুনানে তিরমিজি: ২০০৪) এই হাদিসটি চূড়ান্ত সফলতার জন্য উত্তম আচরণের গুরুত্বকে এক নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করে।

তাছাড়া, আবু উমামা আল-বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি ঘরের জামিন হয়েছেন: "আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ প্রান্তে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে ন্যায্য অবস্থানে থেকেও ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করে। আর আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে ঠাট্টার ছলেও মিথ্যা কথা বলে না। আর আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র সুন্দর।" (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮০২) এটি স্পষ্ট করে যে, উত্তম চরিত্রই একজন মুমিনকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জনে সাহায্য করে।

অন্যের প্রতি সেই আচরণ, যা নিজের জন্য প্রত্যাশিত

সুন্দর আচরণের এক সহজ অথচ গভীর নীতি হলো, নিজের জন্য যা পছন্দ, অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করা। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবদে রাব্বিল কা’বা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চায় এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান রেখে মৃত্যুবরণ করে এবং মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।" (সহিহ মুসলিম: ১৮৪৪) এই হাদিসটি মানবীয় সম্পর্ককে সুন্দর ও সুসংহত করার একটি স্বর্ণালী সূত্র প্রদান করে। এটি আমাদের শেখায় যে, যেকোনো আচরণের আগে নিজেকে অন্যের অবস্থানে বসিয়ে চিন্তা করা উচিত। এই এক নীতি অনুসরণ করেই আমরা আমাদের ব্যবহারকে সর্বোত্তম স্তরে উন্নীত করতে পারি।

উপসংহারে বলা যায়, ইসলামে উত্তম চরিত্র ও সুন্দর আচরণ কেবল একটি নৈতিক গুণ নয়, বরং এটি ঈমানের পরিপূর্ণতা এবং পরকালীন সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহভীতি এবং মানুষের প্রতি সদয় ব্যবহারই জান্নাতের পথে সবচেয়ে বেশি মানুষকে পরিচালিত করবে। আমাদের উচিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে নিজেদের আচরণকে সুন্দর করা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে এর প্রভাব বিস্তার করা, যাতে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হতে পারি।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ