ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

ভোট ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ: আগামী নির্বাচনে কার পাল্লা ভারী?

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২২ ১৬:৫৫:২৫
ভোট ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ: আগামী নির্বাচনে কার পাল্লা ভারী?

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে চলছে তীব্র জল্পনা-কল্পনা। প্রতিটি দলই নিজ নিজ হিসাব-নিকাশ কষছে, তবে পিনাকী ভট্টাচার্যের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা আগামী নির্বাচনের ফলাফলের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পিনাকীর বিশ্লেষণে, কে জিতবে তা নির্ভর করছে দলগুলোর 'অস্তিত্বের যৌক্তিকতা' (Raison d'Être) এবং ভারতের প্রতি তাদের অবস্থানের ওপর।

'অস্তিত্বের যৌক্তিকতা'র সংকট: BNP'র দুর্বলতা

পিনাকী ভট্টাচার্য তার বিশ্লেষণে জোর দিয়েছেন একটি রাজনৈতিক দলের টিকে থাকার জন্য 'রেজো দেত্র' বা অস্তিত্বের যৌক্তিকতার ওপর। তার মতে, একটি দলের স্পষ্ট 'রেজো দেত্র' না থাকলে তা জনসমর্থন ধরে রাখতে পারে না এবং নীতিতে ধারাবাহিকতা থাকে না। পিনাকীর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিএনপি বর্তমানে এই সংকটে ভুগছে। দলটি তার ঐতিহাসিক 'রেজো দেত্র' হারিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি, যা একসময় মুসলিম লীগের ভোট ব্যাংক এবং ভারত-বিরোধী চীনা বামদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। এই দুর্বলতার কারণে আধুনিক তরুণ প্রজন্ম বিএনপি'র প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে না এবং দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ১৫% 'হার্ডকোর' ভোট ধরে রাখা সম্ভব হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, পিনাকী স্পষ্টতই বলেছেন যে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপি'র জেতার কোনো সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের সমীকরণ

যদিও পিনাকী সরাসরি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেননি, তবে তার বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে, বিএনপি'র দুর্বলতার সুযোগে 'তত্ত্বাবধায়ক বিএনপি' হিসেবে জামায়াত ভারত-বিরোধী ভোট টানতে পারে। তবে পিনাকী এ-ও উল্লেখ করেছেন যে, জামায়াত এখনো বিএনপির শূন্যস্থান পূরণ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। অন্যদিকে, পিনাকী মনে করেন, প্রশাসন (সেনাবাহিনী, পুলিশ) এবং সরকারি কর্মকর্তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে আগামী সরকারের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছে, যা ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়।

নির্বাচনী ফলাফলের মূল নিয়ামক: ভারতের অবস্থান

পিনাকী ভট্টাচার্য তার বিশ্লেষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাবকে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, আগামী নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করবে ভারতের প্রতি সেই দলের অবস্থানের ওপর। পিনাকী সাবেক ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে দেখিয়েছেন যে, ভারত তার সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে তাদের স্বার্থবিরোধী কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না এবং প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত। এই প্রেক্ষাপটে, পিনাকীর মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর ভারতনীতিই শেষ পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী ভাগ্য নির্ধারণ করবে। জনগণ কোনো দলের চাকর নয়, বরং তাদের জীবনমান ও স্বাধীনতা রক্ষাই মূল বিষয়।

প্রকৃত ক্ষমতা জনগণের হাতে

পিনাকী ভট্টাচার্য জোর দিয়েছেন যে, জনগণের প্রকৃত ক্ষমতা ফিরে আসা এবং তাদের স্বকীয় পথে দেশকে পুনর্গঠন করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। তার মতে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় মর্যাদা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার লড়াইয়ে জনগণই শেষ কথা বলবে। কোনো কমিশন বা এলিটদের সিদ্ধান্ত নয়, বরং জনগণের ইচ্ছায় আসা পরিবর্তনই দীর্ঘস্থায়ী হবে। এই লড়াই কঠিন হলেও অসম্ভব নয়, এবং এই শপথ নিয়েই বাংলাদেশকে তার নিজস্ব পথে এগিয়ে যেতে হবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ