ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

তালিকাচ্যুত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য কি সিদ্ধান্ত!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২২ ২০:২৫:৫২
তালিকাচ্যুত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য কি সিদ্ধান্ত!

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি ইসলামিক ব্যাংক একীভূত হয়ে দেশের বৃহত্তম ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এই মেগা একীভূতকরণ একদিকে যেমন ব্যাংক খাতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, অন্যদিকে এটি শেয়ারবাজারের হাজার হাজার সাধারণ বিনিয়োগকারীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

একীভূত হওয়ার পরপরই এই ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হবে, এবং ব্যাংক কোম্পানি আইনে শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট বিধান না থাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি বিষয়টি "বিশেষ বিবেচনায়" রেখেছে, তবে এই আশ্বাস বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে যথেষ্ট হচ্ছে না।

আমানতকারীদের সুরক্ষা বনাম বিনিয়োগকারীদের উপেক্ষা:

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচটি ব্যাংকের সম্মিলিত আমানতের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যক্তি আমানতকারীদের ৪৬ হাজার কোটি টাকা ফেরত নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরা নতুন ব্যাংকের শেয়ার পেতে পারেন এমন ইঙ্গিতও রয়েছে। তবে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সুরক্ষার কথা এখনো উল্লেখ করা হয়নি, যা তাদের মধ্যে তীব্র হতাশা সৃষ্টি করেছে। এই বৈষম্যমূলক আচরণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

শেয়ারের দরে ধস: পুঁজি হারানোর শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা

একীভূতকরণের ঘোষণার পর থেকেই এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দরে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। যেসব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা ছিল, সেগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ৫ টাকার নিচে নেমে এসেছে। এর অর্থ হলো, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধনের অর্ধেকের বেশি ইতিমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছেন। যারা আরও বেশি দামে এসব শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের লোকসান আরও ভয়াবহ। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন যে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তাদের ক্ষতি সামাল দিতে পারলেও, ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে এই বিশাল লোকসান পূরণ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ক্ষতিপূরণের আলোচনা: ধোঁয়াশা ও অনিশ্চয়তা

যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বা নিশ্চিত আশ্বাস আসেনি। বিএসইসি’র সঙ্গে যৌথ বৈঠক করার পরিকল্পনা থাকলেও, এর ফলাফল এখনো অনিশ্চিত। বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি’র কাছ থেকে একটি জোরালো এবং কার্যকর ভূমিকা আশা করছেন। তাদের যুক্তি, ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্দশার পেছনে বিনিয়োগকারীদের কোনো ভূমিকা ছিল না, তাহলে কেন তাদেরকেই সব লোকসানের দায়ভার বহন করতে হবে? এই প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

পাঁচ ব্যাংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের চিত্র:

এক্সিম ব্যাংক: মোট মূলধন ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩০.২৮% শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: মোট মূলধন ৯৮৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩১.৪৬% শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: মোট মূলধন ১,২০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৫.০৪% শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে—যা এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: মোট মূলধন ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৭.৯২% শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

ইউনিয়ন ব্যাংক: মোট মূলধন ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩০.৯৩% শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক দুর্বলতা ও আস্থার সংকট

এই পাঁচটি ব্যাংকের বেহাল দশা শুধু তাদের নিজস্ব বিনিয়োগকারীদেরই নয়, বরং পুরো ব্যাংকিং খাতের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ডজনখানেক ব্যাংকের শেয়ার তাদের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে। এমনকি সিটি ব্যাংকের মতো লাভজনক ব্যাংক, যা ২০২৪ অর্থবছরে এক হাজার কোটি টাকা মুনাফার ক্লাবে যোগ দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছে, তার শেয়ারও ২৫ টাকায় আটকে আছে। এটি সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবকেই প্রতিফলিত করে। এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পাঁচ ব্যাংকের এই একীভূতকরণ দেশের ব্যাংক খাত এবং শেয়ারবাজারের জন্য একটি গভীর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বাজারের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসি’র দ্রুত, স্বচ্ছ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে তা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ