ঢাকা, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

জমির খতিয়ানে নাম নেই? এই আইনি উপায়ে ফেরত পাবেন সম্পত্তি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১১:৪৩:০২
জমির খতিয়ানে নাম নেই? এই আইনি উপায়ে ফেরত পাবেন সম্পত্তি

বাংলাদেশে জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। বিশেষ করে অনেকেই পৈতৃক বা ওয়ারিশান সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন কেবল খতিয়ানে নাম না থাকার কারণে। অথচ আইন অনুসারে, সঠিক প্রক্রিয়া মেনে চললে খতিয়ানে নাম না থাকলেও নিজের প্রাপ্য সম্পত্তি ফেরত পাওয়া একেবারেই সম্ভব।

মৃত্যুর পরেই শুরু হয় উত্তরাধিকার অধিকার

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বলা আছে—কোনো ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় উত্তরাধিকার সৃষ্টি হয় না। একজনের মৃত্যুর পরই তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আইনত ভাগ হয়ে যায়। তবে মৃত ব্যক্তির নামে যদি মূল খতিয়ান (যেমন সিএস খতিয়ান) এ কোনো জমি না থাকে, তাহলে তিনি সেই জমির মালিক হিসেবে গণ্য হবেন না। ফলস্বরূপ, তার ওয়ারিশরাও সেই সম্পত্তির দাবি করতে পারবেন না।

খতিয়ান নির্ধারণ করে কার মালিকানা

ধরা যাক, রহিম নামের এক ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় একটি জমি চাষ করতেন, কিন্তু সিএস খতিয়ানে তার নাম ছিল না—বরং ছিল বড় ছেলের নামে। এই ক্ষেত্রে রহিম সাহেব মৃত্যুবরণ করলে বড় ছেলেই আইন অনুযায়ী মূল মালিক হিসেবে স্বীকৃত হবেন এবং তার উত্তরাধিকারীরাই সেই জমির দখল পাবেন।

তবে পরবর্তী এসএ, আরএস, বিএস বা সিটি জরিপে যদি অন্য কোনো ওয়ারিশের নাম বাদ পড়ে যায়, তাতে তাদের অধিকার নষ্ট হয় না। কারণ মালিকানা নির্ধারিত হয় মূল খতিয়ানে থাকা নামের ভিত্তিতে।

এক খতিয়ানে নাম থাকলেই একক মালিকানা নয়

অনেকে মনে করেন, খতিয়ানে যার নাম আছে, জমিটি শুধুমাত্র তারই। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। উদাহরণস্বরূপ, সেলিম সাহেবের নামে সিএস বা এসএ খতিয়ানে জমি থাকলেও তার মৃত্যুর পর স্ত্রী, সন্তান ও অন্যান্য বৈধ উত্তরাধিকারীরা সমানভাবে অংশীদার হবেন।

বিএস বা আরএস জরিপে কোনো এক সন্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত হলেও সে একক মালিক হয়ে যায় না। আইন অনুযায়ী, সকল ওয়ারিশরাই যৌথ মালিকানা ভোগ করবেন।

নাম বাদ পড়লে যা করবেন

যদি খতিয়ানে আপনার নাম না থাকে, তবে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিতে হবে ওয়ারিশ সনদ। এটি পাওয়া যায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছ থেকে—যে এলাকায় জমিটি অবস্থিত, সেই অনুযায়ী।

আদালতের মাধ্যমে মালিকানা ফেরত পাওয়ার পথ

ওয়ারিশ সনদ হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় দলিল ও খতিয়ানের কপি সংযুক্ত করে বাটোয়ারা মামলা (বা বণ্টন মামলা) দায়ের করা যায়। আদালতের রায় অনুযায়ী নামজারি করলে যৌথ মালিকানা আইনত প্রতিষ্ঠা পায়।

নামজারি সম্পন্ন হলেও যদি অন্য ওয়ারিশরা জমির দখল বুঝিয়ে না দেয়, তাহলে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা যায়। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তায় দখল পুনরুদ্ধার সম্ভব।

আইনের দৃষ্টিতে ওয়ারিশের অধিকার

আইন স্পষ্টভাবে বলে—যদি মৃত ব্যক্তির নামে মূল খতিয়ান (যেমন সিএস) এ কোনো সম্পত্তি না থাকে, তবে তিনি মালিক নন এবং তার ওয়ারিশরাও সেই জমির দাবি করতে পারবেন না। কিন্তু পরবর্তী জরিপ (এসএ, আরএস, বিএস বা সিটি) খতিয়ানে নাম বাদ গেলেও, মূল মালিকের ওয়ারিশরা তাদের বৈধ অংশ ফেরত পাওয়ার অধিকার রাখেন।

বাংলাদেশে অনেক মানুষ জমি রেকর্ড বা খতিয়ান থেকে নাম বাদ পড়ার কারণে আজও বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ আইন জানলে ও সঠিক পদক্ষেপ নিলে প্রাপ্য সম্পত্তি ফেরত পাওয়া সম্ভব। তাই খতিয়ানে নাম না থাকলেও ভয় নয়—আইনি উপায়েই ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনার অধিকার।

প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: খতিয়ানে নাম না থাকলে কি জমি ফেরত পাওয়া সম্ভব?

হ্যাঁ, আপনি যদি মূল মালিকের বৈধ ওয়ারিশ হন, তবে আইনি প্রমাণসহ বাটোয়ারা মামলার মাধ্যমে জমি ফেরত পেতে পারেন।

প্রশ্ন ২: ওয়ারিশ সনদ কোথা থেকে নিতে হয়?

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছ থেকে ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করা যায়।

প্রশ্ন ৩: নামজারি শেষে জমি না পেলে কী করতে হবে?

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করুন; প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তায় দখল পুনরুদ্ধার করা যায়।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ