ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

রাসুলের (সা.) দেখানো পথে সম্পদ সঞ্চয়: জানুন স্মার্ট উপায়!

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১২:১০:৪২
রাসুলের (সা.) দেখানো পথে সম্পদ সঞ্চয়: জানুন স্মার্ট উপায়!

সম্পদ মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আত্মমর্যাদা এবং দ্বীনের পথে চলার জন্যও অপরিহার্য। পার্থিব জীবনে অর্থোপার্জনের প্রয়োজনীয়তা কেবল আধুনিক সমাজের জন্য নয়, বরং আদিকাল থেকেই মানবজাতি উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল জীবনযাপন করে আসছে। আত্মসম্মান বজায় রেখে সমাজে টিকে থাকার জন্য অর্থের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। একজন সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তির জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া বা সন্তানদেরকে অসহায় অবস্থায় রেখে যাওয়া কখনোই কাম্য নয়। ইসলাম এই মানবিক প্রয়োজন এবং আত্মমর্যাদার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখেছে।

সন্তানের জন্য সঞ্চয়: ইসলামের নির্দেশনা

হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্পদ সঞ্চয় করা শুধু বৈধই নয়, বরং সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রেখে যাওয়াকে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। হজরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.)-এর বর্ণনায় পাওয়া যায়, বিদায় হজের সময় রাসুল (সা.) তাকে দেখতে এসেছিলেন যখন তিনি মরণাপন্ন। সাদ (রা.) তার দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করার অনুমতি চাইলে রাসুল (সা.) নিষেধ করেন। এরপর অর্ধেক দানের প্রস্তাব দিলেও তিনি অসম্মত হন এবং এক-তৃতীয়াংশ দানের অনুমতি দিয়ে বলেন, "আর তুমি তোমার ওয়ারিশদের অসহায় এবং মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াচ্ছে— এ অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া ভালো।" (মুসলিম, হাদিস: ১৬২৮; বুখারি, হাদিস: ১২৯৫)। এই হাদিসটি সম্পদ সঞ্চয়ের বিষয়ে ইসলামের মূলনীতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

রাসুল (সা.)-এর সঞ্চয়ের দৃষ্টান্ত

আমরা দেখতে পাই যে, রাসুল (সা.) নিজেও পরিবারের জন্য সম্পদ সঞ্চয় করতেন। হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বনু নজিরের খেজুর গাছ বিক্রি করে দিতেন এবং পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য সামগ্রী রেখে দিতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৫৭)।

আরেকটি হাদিসে লাকিত ইবনে সাবুরা (রা.) উল্লেখ করেন যে, তিনি রাসুল (সা.)-এর খেদমতে গেলে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) তাদের জন্য খাবার তৈরি করান। এরপর রাসুল (সা.) এসে খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন যে, তারা খাবার পেয়েছেন। রাখাল তার ছাগলগুলো নিয়ে এলে একটি ছাগলছানার আওয়াজ শোনা যায়। রাসুল (সা.) রাখালকে ডেকে জানতে চান কী বাচ্চা দিয়েছে এবং একটি ছাগল জবাই করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, "তুমি মনে করো না যে— আমরা তোমার জন্য ছাগল জবাই করেছি। আসলে আমাদের ১০০টি ছাগল রয়েছে। আমরা এর সংখ্যা আর বাড়াতে চাই না। তাই আমাদের রাখাল যখন একটি বাচ্চার খবর দেয়, আমরা সেটির জায়গায় একটি ছাগল জবাই করে ফেলি।" (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৪২)।

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুল (সা.) পরিবারের জীবিকার জন্য ১০০টি ছাগল পালন করতেন এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন রাখালও নিযুক্ত ছিল। সেকালের জীবনমানের হিসেবে এটি যথেষ্ট ছিল। সুতরাং, আজকের দিনের জীবনমানের বিবেচনায় উপার্জন ও সঞ্চয় করা মোটেই দোষণীয় নয়।

সঞ্চয় ও অপচয়: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

তবে, এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, ইসলাম সম্পদের পাহাড় গড়তে নিরুৎসাহিত করেছে। কেবল সঞ্চয় করে সম্পদের স্তূপ তৈরি করা বা পাহাড় নির্মাণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত অপছন্দনীয়। কারণ, ইসলামে দুনিয়ার সঞ্চয়ের চেয়ে আখিরাতের সঞ্চয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই ইসলাম মুক্ত হস্তে খরচ করতে উৎসাহিত করে।

নবী পরিবারের মহান মুখপাত্র উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনায় নবীজির জীবনযাত্রার মান ও জীবিকার চিত্র ফুটে ওঠে। আয়েশা (রা.) বলেন, "রাসুল (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, অথচ একই দিনে জায়তুনের তেল দিয়ে পেট ভরে দুইবার রুটি খেয়ে যাননি।" (মুসলিম, হাদিস: ২৯৭৪)। হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর বাণীতেও নবীজির ক্ষুধা ও অর্থকষ্টের কথা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, "আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি— ক্ষুধায় বাঁকা হয়ে পুরো দিন পার করে দিচ্ছেন। উদরপূর্ণ করার মতো এক টুকরো খেজুরও তার ঘরে ছিল না।"

এই দৃষ্টান্তগুলো একদিকে যেমন অল্পে তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়, তেমনি অন্যদিকে সঞ্চয় ও ব্যয়ের মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরে। ইসলামি জীবনবিধান অনুযায়ী, সম্পদ উপার্জন, সঞ্চয় এবং ব্যয় সবকিছুই হতে হবে শরিয়তের সীমার মধ্যে, যাতে পার্থিব জীবন ও পরকালের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ