ঢাকা, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বিয়ের প্রথম রাত কিভাবে কাটাবেন, ছেলে মেয়ে উভয়ের জানা জরুরি

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ০৮:০৫:৩২
বিয়ের প্রথম রাত কিভাবে কাটাবেন, ছেলে মেয়ে উভয়ের জানা জরুরি

ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী সহবাস: সঠিক জ্ঞান ও ভুলত্রুটি এড়ানোর উপায়

বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ইসলামের অন্যতম পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধনকে আরও সুন্দর ও বরকতময় করতে ইসলামিক শরীয়তে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা। অজ্ঞতা বা ভুল ধারণার কারণে অনেকেই সহবাসের সময় এমন কিছু ভুল করে বসেন, যা ব্যক্তিগত জীবন, দাম্পত্য সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই নিবন্ধে, একটি ভিডিওর আলোকে সহবাসের ইসলামিক নিয়মাবলী এবং প্রচলিত ভুলত্রুটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, যা আপনার দাম্পত্য জীবনকে আরও সুন্দর করতে সাহায্য করবে।

ইসলামিক সহবাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক ও ভুলত্রুটি:

অন্য কারও কথা মনে করা:

সহবাসের সময় নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে অন্য কোনো নারীকে মনে মনে কল্পনা করা ইসলামে জিনা (ব্যভিচার) হিসেবে গণ্য। এই একই নিয়ম নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি কোনো নারী তার স্বামীর সাথে মিলিত হওয়ার সময় অন্য পুরুষকে কল্পনা করেন, তাহলে সেটিও জিনা হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। এটি একটি গুরুতর ভুল যা যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায়, তাই এ ধরনের মানসিক জিনা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

স্ত্রীর স্তন চুম্বন ও দুধ পান:

ইসলামে পুরুষ তার স্ত্রীর বুকে মুখ লাগাতে বা চুম্বন করতে পারেন। তবে, স্ত্রীর দুধ পান করা এবং তা গলা পর্যন্ত চলে যাওয়া হারাম। যদি ভুলবশত এমনটি হয়ে যায়, তাহলে তওবা করতে হবে। এক্ষেত্রে দম্পতির বিবাহের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।

লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত:

স্বামী-স্ত্রী একে অপরের দেহ দেখতে বা স্পর্শ করতে পারেন। কিন্তু সহবাসের সময় একে অপরের লজ্জাস্থানের দিকে সরাসরি দৃষ্টিপাত না করাই উত্তম। কারণ কিছু ইসলামিক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, এটি দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করতে পারে এবং দাম্পত্য সম্পর্ককে দুর্বল করে তোলে।

সহবাসের অবস্থান:

সহবাসের একটি সঠিক ধরন হলো, পুরুষ নিচে থাকবে এবং নারী উপরে থাকবে না। এই অবস্থানকে সঠিক ইসলামিক ধর্মসম্মত মনে করা হয় না। এমনভাবে সহবাস করলে নারীর বন্ধ্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং পুরুষের লিঙ্গে আঘাত লাগার আশঙ্কা থাকে। এই বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।

সহবাসের পর পরিচ্ছন্নতা:

সহবাস সম্পূর্ণ হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই লজ্জাস্থান পরিষ্কার করার জন্য আলাদা কাপড় ব্যবহার করা উচিত। একই কাপড় ব্যবহার করা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ, যা দুজনের মধ্যে একে অপরের প্রতি ঘৃণা জন্মাতে পারে।

বিসমিল্লাহ পাঠের গুরুত্ব:

মিলনের পূর্বে "বিসমিল্লাহ শরীফ" পাঠ করা সুন্নাহ। মনে রাখতে হবে, পোশাক খোলার আগেই বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। যদি বিসমিল্লাহ না পড়া হয়, তাহলে শয়তান সহবাসে অংশ নেয়। ঘরের ভেতরে প্রবেশের সময় ডান পা আগে রেখে তারপর বিসমিল্লাহ পড়ে প্রবেশ করলে শয়তান ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।

সহবাসের সময় কথোপকথন ও উলঙ্গ হওয়া:

সহবাসের সময় কথা বলা মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। যদি কথা বলার সময় গর্ভধারণ হয়, তাহলে সেই বাচ্চা তোতলা হতে পারে। একইভাবে, সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে সহবাস করা উচিত নয়, কারণ এতে সন্তান বেহায়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অন্যান্য সতর্কতা ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলী:

বয়স্ক মহিলাদের সাথে বা দাঁড়িয়ে সহবাস: বেশি বৃদ্ধ মহিলার সঙ্গে বা দাঁড়িয়ে সহবাসে লিপ্ত হওয়া শরীরকে দুর্বল করে এবং বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণ হতে পারে।

ভরা পেটে সহবাস: ভরা পেটে সহবাস করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

সহবাসের পর ঠাণ্ডা পানি পান বা গোসল: সহবাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি পান করা বা গোসল করা ঠিক নয়। কারণ, এই সময়ে শরীর বেশি গরম থাকে এবং ঠাণ্ডা পানি বা গোসল শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এমনকি পুরুষের যৌন শক্তি কমে যেতে পারে। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করা ভালো।

মাসিক চলাকালীন সহবাস: কোনো মহিলার মাসিক চলাকালীন সময়ে সহবাস করা সম্পূর্ণভাবে হারাম ও নাজায়েজ, এমনকি বিবাহের প্রথম রাতেও এটি বৈধ নয়। যদি কেউ এটিকে জায়েজ মনে করে, তাহলে সে প্রকাশ্য কাফের হয়ে যাবে। তবে, মাসিকের সময় নারী অপবিত্র হয়ে যায় এমন ধারণা ভুল। ঋতু চলাকালীন সময়ে স্ত্রীর পাশে শুয়ে থাকা জায়েজ, যদি সহবাসের ভয় না থাকে। শুধুমাত্র পিরিয়ডের সময় সহবাস করা হারাম।

পায়ুপথে সঙ্গম: স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করা কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি একদমই নাজায়েজ।

দাম্পত্য গোপনীয়তা রক্ষা:

মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে নিকৃষ্ট পুরুষ ও নারী তারাই হবে, যারা নিজেদের পার্টনারের গোপন রহস্য বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করে। যেমন, বিবাহের পর সকালে বন্ধুরা এসে জিজ্ঞাসা করে, "বল রাতে কী কী হয়েছে?" আর বর বা কনে সম্পূর্ণ বিবরণ দিতে শুরু করে। এটি ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়েজ, এবং আল্লাহ তায়ালা এমনটি একদমই পছন্দ করেন না।

স্ত্রীর থেকে দূরে থাকার সময়সীমা:

ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর থেকে দীর্ঘ দিন দূরে থাকতে পারে না। স্ত্রীর থেকে দূরে থাকার সর্বোচ্চ সময়সীমা মাত্র চার মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বেশি সময় স্ত্রী থেকে দূরে থাকা নিষিদ্ধ।

হালাল সহবাসের বরকত:

হযরত ইমাম গাযযালী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, সহবাস করা জান্নাতে প্রাপ্ত সুখগুলোর মধ্যে একটি।হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) বলেছেন, মানুষের জন্য সহবাস এমন এক প্রয়োজন, যেমন দিনের জন্য সূর্যের। কারণ, এটি রাতের হৃদয়ের সুখের একটি।

উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, যখন একজন পুরুষ তার স্ত্রীর হাত ধরে, তখন তার আমলনামায় একটি নেকি লেখা হয়। যখন সে স্ত্রীর গাল স্পর্শ করে, তখন দশ নেকি লেখা হয়। আর যখন সে সহবাস করে, তখন সেটি দুনিয়ার সবথেকে উত্তম কাজ হয়ে যায়। সহবাসের পর যখন সে গোসল করে, তখন তার শরীরের যত লোমে পানি পৌঁছাবে, প্রত্যেক লোমে এক একটি করে নেকি দেওয়া হবে, একটি করে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং তার মর্যাদাকে উঁচু করে দেওয়া হবে।

নববিবাহিতদের জন্য বিশেষ উপদেশ:

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, "আমার যেই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হতে যাচ্ছে, আমার মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করবে না।" তখন তিনি বললেন, "ভালোবাসা আল্লাহর তরফ থেকে আসে, আর ঘৃণা শয়তানের থেকে। তুমি এক কাজ করো, যখন ওই মেয়ের সঙ্গে প্রথমবার মিলিত হবে, তার পূর্বে দু'রাকাত নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করো। আর এমনভাবে আদায় করো যেন তুমি ইমাম আর সে তোমার অনুসারী (অর্থাৎ নামাজের জন্য পুরুষ আগে দাঁড়াবে এবং স্ত্রী তার পিছনে)।" আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা তোমার স্ত্রীর হৃদয়ে ভালোবাসা জাগিয়ে দেবেন।

বিবাহের মাধ্যমে একটি নতুন জীবনের সূচনা হয়। যুবক-যুবতীদের উচিত ইসলামিক নীতি অনুযায়ী তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করা, যাতে ভবিষ্যতে আল্লাহর রহমত তাদের জীবনে বর্ষিত হয় এবং বিবাহিত জীবন সুখের ও সুন্দর হয়। তাই বিয়ের প্রথম রাত থেকেই ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক প্রতিটি বিষয় পালন করার নিয়ত করা উচিত। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করেন, আমীন।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ