ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ব্যাংকে টাকা রেখে মাসিক মুনাফা/লভ্যাংশ দিয়ে সংসার চালানো কি জায়েজ জানুন

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১০:৩৯:১৬
ব্যাংকে টাকা রেখে মাসিক মুনাফা/লভ্যাংশ দিয়ে সংসার চালানো কি জায়েজ জানুন

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে আগ্রহী বহু মানুষ প্রায়শই জিজ্ঞাসা করেন: জীবনযাত্রার ব্যয়নির্বাহের জন্য ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা সেভিংস ডিপোজিট থেকে অর্জিত মাসিক লভ্যাংশ গ্রহণ করা কি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ? প্রচলিত ধারণা এবং 'ইসলামী ব্যাংক' নাম থাকা সত্ত্বেও শরিয়ত বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের অর্থ গ্রহণকে 'শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বিপদজনক' বলে সতর্ক করেছেন।

প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমে দুর্বলতা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজেদেরকে 'ইসলামী ব্যাংক' হিসেবে পরিচয় দেয়, সেগুলোতে অর্থ রাখা অনেকের কাছে নিরাপদ মনে হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের মতে, এই ব্যাংকগুলো প্রায়শই কেবল নামেই ইসলামী থাকে, কিন্তু বাস্তবিক কার্যক্রমে শরিয়াহর নিয়ম-কানুন পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যাংকিং সংস্থাগুলো ভুয়া বা বেআইনি লেনদেনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই এই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত লভ্যাংশ গ্রহণ করা নিরাপদ বা বৈধ নয়।

সব ধরনের ডিপোজিটের বৈধতা প্রসঙ্গে ফতোয়া

বর্তমানে বাংলাদেশে চালু যেকোনো মেয়াদী আমানত (যেমন ডিপিএস বা এফডিআর) অথবা সঞ্চয়ী হিসাবে রাখা অর্থের বিনিময়ে ব্যাংক যে সুবিধা বা অর্থনৈতিক প্রতিদান প্রদান করে, তা গ্রহণ করা শরিয়তসিদ্ধ নয়। এর মূল কারণ হলো, ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক বিনিয়োগ পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহর মানদণ্ড মেনে পরিচালিত হয় না। এই লভ্যাংশ বস্তুত সুদের সমতুল্য, যা কুরআন ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী হারাম।

এই নিষেধাজ্ঞা শুধু প্রথাগত বা ইসলামী ব্যাংকেই সীমাবদ্ধ নয়, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) যেমন বিকাশ থেকেও গ্রাহকরা যে মুনাফা বা লভ্যাংশ অর্জন করেন, সেটি গ্রহণ করাও জায়েজ নয়।

ব্যাংকের যে পরিষেবাগুলি গ্রহণ করা বৈধ

যেসব গ্রাহক সুদমুক্ত লেনদেন বজায় রাখতে চান, তাঁদের জন্য ব্যাংকের নির্দিষ্ট কিছু পরিষেবা গ্রহণ করা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে:

চলতি হিসাব (Current Account): এই ধরনের হিসাবে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা রাখা সম্পূর্ণ জায়েজ, কারণ ব্যাংক এই হিসাবের বিপরীতে কোনো লভ্যাংশ প্রদান করে না।

লকার সেবা: মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকের লকার বা ভ্যালুয়েবল আইটেম রাখার সেবাটি সম্পূর্ণভাবে শরিয়তসম্মত, যেহেতু এটি কেবল আমানত রাখার পরিষেবা হিসেবেই গণ্য।

অন্যদিকে, সেভিংস ও ফিক্সড ডিপোজিটে অর্থ গচ্ছিত রাখা বৈধ নয়, যেহেতু এগুলোতে সুদের সমতুল্য সুবিধা পাওয়া যায়।

অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ব্যবহার

যদি কোনো গ্রাহক ভুলক্রমে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ফলে লভ্যাংশ পেয়ে যান, তবে সেই মূল অর্থটি তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত মুনাফার অংশটি তাঁর জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই অতিরিক্ত অর্থ দান করা অথবা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দেওয়া উত্তম।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় 'মুনাফা' নামে যে অর্থ গ্রাহককে দেওয়া হয়, শরিয়তের বিচারে তা গ্রহণ করা বৈধ নয়। পবিত্র উপার্জনের নীতি বজায় রাখতে এবং হালাল-হারাম বেছে চলতে এই ধরনের আর্থিক প্রতিদান থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।

ফতোয়ার উৎস: বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪২৬; আলমাআয়ীরুশ র্শইয়্যাহ, পৃ. ১৫৬, ২১০-২১৬, ২৪২-২৫৫; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ২/১৫৩৯, ১৫৯৯; সংখ্যা ১২, ১/৬৯৭ এর ভিত্তিতে ফতওয়া বিভাগ, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া, ঢাকা কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ