ঢাকা, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ভূমি রেকর্ডের ভুল সংশোধনে নতুন নিয়ম: আদালতের ক্ষমতা বাতিল!

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২২ ০৯:০২:০৭
ভূমি রেকর্ডের ভুল সংশোধনে নতুন নিয়ম: আদালতের ক্ষমতা বাতিল!

ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমাতে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এখন থেকে রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রথা চিরতরে বিলুপ্ত হতে চলেছে। সরকারের এই নতুন নীতিমালায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের শুরু থেকে দেওয়ানি আদালত রেকর্ড সংশোধন সংক্রান্ত কোনো আবেদন আর গ্রহণ করবে না। পাশাপাশি, বর্তমানে চলমান মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

১. কেন বন্ধ হচ্ছে এই মামলা প্রক্রিয়া?

ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এতদিন সিএস, এসএ, আরএস, বিএস বা সিটিজ জরিপে কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তা শুধরাতে ভূমি মালিককে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হতো। এই দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হচ্ছে।

ভূমি উপদেষ্টা এবং ভূমি সচিব নিশ্চিত করেছেন যে, ২০২৬ সালের সূচনা থেকেই এই নীতি কার্যকর হবে। অর্থাৎ, ওই সময় থেকে আদালত কোনো রেকর্ড সংশোধন মামলা আর রিসিভ করবে না, এমনকি কেউ নতুন করে মামলা দায়ের করলেও আদালত তা গ্রহণ করবে না।

২. সমাধান: আসছে শতভাগ নির্ভুল ডিজিটাল জরিপ (BDS)

কেন এই আমূল পরিবর্তন? সরকার জানাচ্ছে, পুরোনো অ্যানালগ পদ্ধতির রেকর্ডে বারবার ভুল দেখা গেছে। এই কারণে এবার বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (BDS) নামে একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নতুন রেকর্ড তৈরির কাজ চলছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই জরিপে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বিডিএস রেকর্ডে শতভাগ নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত তথ্য থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমি মালিককে মামলা করার প্রয়োজন হবে না।

৩. চলমান মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির কঠোর নির্দেশ

বর্তমানে আদালতে চলমান থাকা প্রায় ২০ লাখ দেওয়ানী মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ যেসব রেকর্ড সংশোধন মামলা এখনো আদালতে চলমান রয়েছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নতুন নির্দেশনার শর্তগুলো হলো:

সময়সীমা: বাদী বা বিবাদী সর্বোচ্চ মাত্র দুইবার সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারবেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ: সাক্ষীরা এখন থেকে ভিডিও কল, ইমেইল বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাক্ষ্য দিতে পারবেন, যা প্রক্রিয়াকে দ্রুত করবে।

শাস্তি: মিথ্যা মামলা বা হয়রানিমূলক মামলা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে জরিমানা ও কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।

৪. মাঠ পর্যায়েই হবে ডিজিটাল সংশোধন

ভূমি মালিকদের আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘোরার প্রয়োজন চিরতরে শেষ করতে সরকার নতুন পদ্ধতি চালু করছে। ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৬ সালে দেশব্যাপী বিডিএস জরিপ কার্যক্রম শুরু হলে, ভূমি মালিকরা মাঠ পর্যায়েই জরিপকারীর কাছে আপত্তি ও সংশোধনের আবেদন জানাতে পারবেন।

যদি কারও রেকর্ড বা দাগ নম্বরে ভুল থাকে, সঙ্গে সঙ্গে তা ডিজিটালভাবে সংশোধন করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় আর কোনো দীর্ঘসূত্রিতা থাকবে না।

৫. মুক্তি পাবে ২০ লক্ষ ভূমি মালিক

সরকারি হিসাব অনুসারে, দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ দেওয়ানী মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই ভূমি রেকর্ড সংশোধন সংক্রান্ত। এসব মামলার কারণে একদিকে যেমন ভূমি মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি অন্যদিকে সরকারও ভূমি কর আদায়ে বঞ্চিত হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ভূমি মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি এই ভোগান্তি চিরতরে শেষ হবে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ