ঢাকা, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

সাবধান! অঙ্কুরিত আলু: মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, কেন খাবেন না?

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১১:১৪:৪৭
সাবধান! অঙ্কুরিত আলু: মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, কেন খাবেন না?

বাঙালি রান্নাঘরে আলুর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সাশ্রয়ী মূল্য এবং এর বহুমুখী ব্যবহারের (যেমন আলু পরোটা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ভর্তা, বিভিন্ন ঝোল তরকারি) কারণে এটিকে প্রায়শই 'সবজির রাজা' বলা হয়। দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য এই খাদ্যদ্রব্যটি অনেকেই একসঙ্গে বিপুল পরিমাণে মজুত করেন। কিন্তু সেই মজুত করা আলুর গা থেকে যখন সবুজ রঙের অঙ্কুর বের হয়, তখন প্রশ্ন জাগে – এই অবস্থায় আলু কি এখনও ভোজ্য বা নিরাপদ? চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

অঙ্কুরিত আলু গ্রহণে ঝুঁকি কোথায়?

স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, অঙ্কুরিত আলুর মধ্যে সোলানিন এবং চ্যাকোনিন নামক দুটি গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড (Glycoalkaloids) যৌগ বিদ্যমান। যদিও এই উপাদানগুলো কম মাত্রায় গ্রহণ করলে কোলেস্টেরল এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাহায্য করতে পারে, তবে এই যৌগগুলোর উচ্চ ঘনত্ব মানবদেহের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড গ্রহণ করলে কী হতে পারে?

গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের মাত্রা কম হলেও তা বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে বমি ভাব, উদরাময় (ডায়রিয়া) এবং পেটের যন্ত্রণা হতে পারে।

অন্যদিকে, এর মাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পেলে তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, দ্রুত হৃদস্পন্দন, নিম্ন রক্তচাপ সহ অন্যান্য জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যে তিনটি কারণে অঙ্কুরিত আলু এড়িয়ে চলা উচিত

পুষ্টিবিদদের মতে, অঙ্কুরিত আলু এড়িয়ে চলার পেছনে তিনটি মূল কারণ রয়েছে:

১. দেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি:

এই যৌগগুলো আলুর পাতা, ফুল, চোখ এবং অঙ্কুরোদগমের অংশে ঘনীভূত অবস্থায় থাকে, যা মানুষের শরীরে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ও স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি করে। গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, মাথা ধরা, পেট ফুলে যাওয়া, উদরাময় এবং আরও গুরুতর অসুস্থতা।

২. স্বাদের তিক্ততা:

অঙ্কুরিত অবস্থায় গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের মাত্রা বাড়ার কারণে আলুর স্বাভাবিক স্বাদের পরিবর্তন ঘটে এবং এটি তেতো লাগতে পারে, যার কারণে খাদ্য হিসেবে এটি অযোগ্য হয়ে ওঠে।

৩. পুষ্টিগুণে ঘাটতি:

অঙ্কুরিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আলু তার মজুত পুষ্টি উপাদানগুলো ব্যবহারের ফলে খাদ্য হিসেবে তার গুণগত মান বা পুষ্টির মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

বিষাক্ততা কমানো কি সম্ভব? এবং সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি

টক্সিন অপসারণের কিছু চেষ্টা করা যেতে পারে, তবে ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যায় না।

আলুর চোখ, সবুজ হয়ে যাওয়া ত্বক, অঙ্কুর এবং আঘাতপ্রাপ্ত অংশগুলো কেটে বাদ দিলে বিষাক্ততার ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে, তবে এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নাও হতে পারে।

আরেকটি উপায়ে অঙ্কুরিত অংশ বাদ দিয়ে শুধু খোসা ছাড়ানো আলু তেলে ভেজে রান্না করলে তা গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের ঘনত্ব কমাতে সাহায্য করতে পারে।

তবে, সেদ্ধ করা, বেক করা বা মাইক্রোওয়েভে গরম করার মতো পদ্ধতিগুলো এই ক্ষতিকারক টক্সিন কমাতে তেমন কার্যকর নয়।

আলু সংরক্ষণের পরামর্শ:

সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হলো সবুজ হয়ে যাওয়া বা অঙ্কুরিত আলু খাদ্যতালিকা থেকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া। অঙ্কুরোদগম এড়াতে, একসাথে বিপুল পরিমাণে আলু মজুত না করে এক বা দুই সপ্তাহের চাহিদা মেটানোর মতো পরিমাণ কেনা উচিত। আলু সংরক্ষণ করার জন্য শীতল, অন্ধকার এবং শুষ্ক স্থান নির্বাচন করা ভালো। সর্বোত্তম উপায় হলো কেনার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটি রান্না করে ব্যবহার করে ফেলা।

FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর)

প্রশ্ন ১: অঙ্কুরিত আলুতে মূলত কোন ক্ষতিকারক যৌগগুলি থাকে?

উত্তর: হেলথলাইনের প্রতিবেদন অনুসারে, অঙ্কুরিত আলুতে প্রধানত সোলানিন এবং চ্যাকোনিন নামক দুটি গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড যৌগ থাকে।

প্রশ্ন ২: গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হতে পারে?

উত্তর: কম মাত্রার গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে বমি, ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা হতে পারে। আর বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি মাথাব্যথা, জ্বর, দ্রুত স্পন্দন এবং নিম্ন রক্তচাপের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রশ্ন ৩: কেন অঙ্কুরিত আলুর স্বাদ তেতো লাগে?

উত্তর: অঙ্কুরিত আলুতে গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে স্বাদে তিক্ততা আসতে পারে, যা এর ভোজ্য হওয়া থেকে বিরত থাকার অন্যতম কারণ।

প্রশ্ন ৪: অঙ্কুরিত আলু থেকে বিষাক্ততা কমানো কি সম্ভব এবং কিভাবে?

উত্তর: আলুর চোখ, সবুজ খোসা এবং অঙ্কুরিত অংশ ফেলে দিলে বিষাক্ততা কিছুটা কমতে পারে। খোসা ছাড়িয়ে ভেজে খেলেও গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের মাত্রা কিছুটা কমে। তবে ফুটন্ত, বেকিং বা মাইক্রোওয়েভিং দ্বারা বিষাক্ততা খুব একটা কমানো যায় না এবং ঝুঁকি থেকে যায়।

প্রশ্ন ৫: আলু সংরক্ষণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী?

উত্তর: অঙ্কুরোদগম এড়াতে, এক বা দুই সপ্তাহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু কিনে ঠান্ডা, অন্ধকার এবং শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। তবে কেনার কয়েক দিনের মধ্যেই রান্না করে ব্যবহার করে ফেলা সবচেয়ে ভালো।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

সেনাবাহিনীসতর্কবার্তা: জারি করল সতর্কতা

সেনাবাহিনীসতর্কবার্তা: জারি করল সতর্কতা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে লক্ষ্য করে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত নানা অসত্য ও ভিত্তিহীন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।... বিস্তারিত