ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

১১৭ বছরের জমির দলিল ডিজিটাল! প্রতারণা এড়াতে অনলাইনে যাচাই করুন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ২০ ১৬:১০:৫৬
১১৭ বছরের জমির দলিল ডিজিটাল! প্রতারণা এড়াতে অনলাইনে যাচাই করুন

জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং মালিকানা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে যে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, এবার তার পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, জালিয়াতি এবং প্রভাবশালী মহলের চাপ সৃষ্টির অবসান ঘটাতে সরকার এনালগ পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ বিদায় জানিয়ে ডিজিটাল রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের সমস্ত ভূ-সম্পত্তির দলিল এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হচ্ছে, যা প্রকৃত ভূমি মালিকদের জন্য এক বিশাল স্বস্তির খবর।

প্রতারণা রুখতে স্ক্যানিং প্রক্রিয়া: জালিয়াতির দিন শেষ

ভূমি ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগত রূপান্তরের অংশ হিসেবে, ১৯০৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১৭ বছরের সমস্ত রেজিস্ট্রি দলিল স্ক্যান করা হচ্ছে। এই স্ক্যানকৃত নথিগুলো একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন ডাটাবেইসে সংরক্ষণ করা হবে।

অতীতে দালাল চক্র ও জালিয়াতরা ভুয়া মালিক সেজে জমির আসল মালিককে প্রতারিত করে অবৈধভাবে জমি হস্তান্তর করত। এই ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রম কার্যকরভাবে রোধ করাই সর্বাত্মক ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য। এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে যে, জমির সত্যতা যাচাই এখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসেই সম্ভব হবে।

আইনি বৈধতা ও সহজে ডাউনলোড করার সুবিধা

এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি উন্মুক্ত হলে, সম্পত্তির মালিকরা দেশে কিংবা বিদেশে অবস্থান করেও তাদের নিজস্ব জমির দলিলের যাবতীয় তথ্য অনলাইনে পরিদর্শন করতে পারবেন। এই উদ্দেশ্যে একটি সরকারি ওয়েবসাইট চালু করা হবে, যেখান থেকে দলিল অনুসন্ধান, সত্যতা যাচাই এবং প্রয়োজন অনুসারে তথ্য ডাউনলোড করা যাবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নির্ধারিত সরকারি ফি দিয়ে ওয়েবসাইট থেকে দলিলের সার্টিফাইড কপি মোবাইল ফোনে ডাউনলোড বা সংরক্ষণ করা যাবে। আইন বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, মূল দলিল কোনো কারণে খোয়া গেলেও এই অনলাইন কপি আদালতে প্রমাণ হিসেবে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য হবে।

স্বস্তি ফিরল সাধারণ মানুষের: বিলুপ্ত হচ্ছে ঘুষের চক্র

আইন বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, নতুন ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগী ও অবৈধ অর্থের লেনদেনের চক্র ভেঙে যাবে। রেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল খুঁজে বের করতে আগে যেখানে ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত 'ঘুষ' বাবদ খরচ করতে হতো—সরকারের মাত্র ২০ টাকা নির্ধারিত ফি থাকা সত্ত্বেও—সেই হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করার প্রয়োজন আর থাকবে না। এর ফলে ভূমি সংক্রান্ত পরিষেবা প্রাপ্তি আরও স্বচ্ছ এবং সহজলভ্য হবে।

১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের নথির জন্য করণীয়

উল্লেখ্য, এই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় কিছু নথি অনলাইনে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে না। বিশেষত যুদ্ধকালীন অস্থিরতার কারণে ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের বেশ কিছু দলিল হারিয়ে গেছে। যে সকল নাগরিকের কাছে এই সময়কালের দলিলের অনুলিপি সংরক্ষিত আছে, তাদের উচিত হবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সেই কপি জমা দেওয়া। এর মাধ্যমেই কেবল হারানো দলিলগুলো কেন্দ্রীয় ডাটাবেইসে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করা যাবে।

ভূমি বিশেষজ্ঞদের জরুরি সতর্কতা

তবে ভূমি বিশেষজ্ঞরা এই সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে জমির মালিকদের প্রতি কিছু সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের পরামর্শ—সম্পূর্ণ সিস্টেমটি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন; যেসব দলিল অনলাইনে স্থান পায়নি, সেগুলো স্ব-উদ্যোগে (বিশেষ করে ১৯৪৭ ও ১৯৭১-এর) জমা দিতে হবে; এবং অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কোনো অবস্থাতেই জাল বা ভুয়া দলিল এই অনলাইন সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবে না।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

১. অনলাইনে জমির দলিল কীভাবে দেখব বা যাচাই করব?

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করা হবে। সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে মালিকরা নিজের জমির দলিলের সব তথ্য দেখতে এবং এর সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।

২. কত সাল থেকে কত সাল পর্যন্ত দলিল অনলাইনে পাওয়া যাবে?

১৯০৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত, মোট ১১৭ বছরের সব রেজিস্ট্রি দলিল স্ক্যান করে এই কেন্দ্রীয় অনলাইন ডাটাবেইসে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

৩. ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের হারানো দলিলের জন্য কী করতে হবে?

যুদ্ধকালীন অস্থিরতার কারণে ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের যে সব দলিল হারিয়ে গেছে, সেগুলোর কপি যাদের কাছে আছে, তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে কপি জমা দিয়ে অনলাইনে যুক্ত করার জন্য আবেদন করতে হবে।

৪. অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা দলিলের কপি কি আইনত বৈধ?

হ্যাঁ। নির্দিষ্ট সরকারি ফি পরিশোধ করে ওয়েবসাইট থেকে মোবাইলে ডাউনলোড করা জমির সার্টিফাইড কপি আইনগতভাবে প্রমাণ হিসেবে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য হবে, এমনকি মূল দলিল হারিয়ে গেলেও।

৫. জাল দলিলও কি এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে?

না। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, জাল দলিলকে কোনো অবস্থাতেই অনলাইন সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকবে না, ফলে জালিয়াতি করে কেউ এই সুবিধা নিতে পারবে না।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সমতা লেদার তৃতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ

সমতা লেদার তৃতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড তাদের চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। এই প্রান্তিকে কোম্পানিটি... বিস্তারিত