যে কারণে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রেন চালাতে চায় ভারত

বাংলাদেশের জমি ও রেললাইন ব্যবহার করে ট্রেন চালাতে চায় ভারত। এটিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের ইন্টারচেঞ্জ (সীমান্তে ট্রেনের পরিচয় পরিবর্তনের জায়গা) পরিদর্শন করে গেছে ভারতের প্রতিনিধিদল।
যে কারণে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চায় ভারত-
জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার গেদে রেলওয়ে স্টেশন থেকে আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার ডালগাঁও রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। কিন্তু এই দুই স্টেশনের মাঝে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করতে চায় তারা। এতে ভারতের ট্রেন চালানোর সময় ও দূরুত্ব কমে আসবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে ঢুকতে চায় ভারতের ট্রেন। পরে ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথ ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেনটি আবার ভারতে প্রবেশ করবে— এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় রেল বোর্ডের এ প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে তুলে ধরেছে ভারতীয় হাইকমিশন। বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে ভারতের ট্রেনের প্রবেশ এবং চিলাহাটি দিয়ে বের হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চিলাহাটি দিতে বের হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী-জলপাইগুড়ি-ধুপগুড়ি-ফালাকাটা-হাসিমারা হয়ে ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাবে নদীয়ার গেদে থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন। এই রেললাইন ব্যবহার করতে পারলে ভারতের অন্তত ১০০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা শুধু দুই দেশের মধ্যে রেলপথে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছি না। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পাশাপাশি নেপাল-ভুটানকেও যুক্ত করতে চাই।
যা আছে ভারতের প্রস্তাবে-
ভারতের ট্রেন যাত্রীবাহী না পণ্যবাহী হবে, এটি তাদের প্রস্তাবে জানানো হয়নি। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ‘ট্রানজিটের’ কথা না বলে বলা হচ্ছে ‘মুভমেন্ট’।
তবে ভারতের কাছে মুভমেন্টের ব্যাখ্যা চাইলে এটিকে ট্রানজিট করিডর হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়।
বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি নথিতে বলা হচ্ছে- ভারতের গেদে থেকে বাংলাদেশের দর্শনা-ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর-চিলাহাটি হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী হয়ে ভুটান সীমান্তবর্তী ভারতীয় রেলওয়ে স্টেশন ডালগাঁও পর্যন্ত একটি এম্পটি রেক (খালি ট্রেন) দিয়ে ট্রায়াল রানের (পরীক্ষামূলক) প্রস্তাব দিয়েছে ভারতীয় রেল বোর্ড। যদিও এটি ভারতের দ্বিতীয় প্রস্তাব। প্রথম প্রস্তাবে ভারতের লক্ষ্য ছিল হলদিবাড়ী পর্যন্ত ট্রেন চালানো।
বাংলাদেশের ভাষ্য-
ভারতের এমন প্রস্তাবের বিপরীতে গত ১৫ মে আন্ত মন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এ বিষয়ে মতামত দিয়েছে। সভায় বলা হয়, বর্তমানে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে আগের প্রস্তাবিত রুট বৃদ্ধি করে ভুটান সীমান্তের কাছে ভারতীয় রেলওয়ে স্টেশন ডালগাঁও পর্যন্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এই প্রস্তাব নিয়ে আবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হওয়ার কথা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সব এজেন্সির সঙ্গে বসেছি। সবাইকে মতামত দিতে বলেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়া বাকিরা মতামত দিয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে জানানো হবে।
সভা সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভারতের ট্রেন চালানোর বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মত দিয়েছে, ট্রানজিটের বিপরীতে যেন উপযুক্ত ‘রেট’ (রেলপথ ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য টাকা নেয়া) নির্ধারণ করা হয়।
সিদ্ধান্তের পর ধরণ নির্ধারণ
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ইন্টারচেঞ্জ কার্যকর। সেগুলো হলো—বেনাপোল-পেট্রোপোল, দর্শনা-গেদে, রোহনপুর-সিংবাধ, বিরাল-রাধিকারপুর ও চিলাহাটি-হলদিবাড়ী। এসব পথে নিয়মিত পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। ইন্টারচেঞ্জে ট্রেনের ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) ও চালক (লোকোমাস্টার) পরিবর্তন করা হয়।
যেমন- বাংলাদেশের ট্রেন ভারতে প্রবেশের আগে দর্শনায় ইন্টারচেঞ্জে বাংলাদেশের ইঞ্জিনের পরিবর্তে ভারতের ইঞ্জিন যুক্ত করা হয়। সেখান থেকে ট্রেনটি ভারতের চালক চালানো শুরু করেন। একইভাবে ঐ ট্রেনটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতের ইঞ্জিন পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ইঞ্জিন যুক্ত করা হয়। চালকও পরিবর্তন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সিদ্ধান্তের আগে চলাচলের ধরণ ঠিক করা হবে না। বাংলাদেশ সরকার যদি ভারতকে ট্রেন চালানোর অনুমতি দেয়, তখন চালানোর ধরণ নিয়ে আলোচনা হবে। এসব প্রশ্নের মীমাংসা করেই ট্রেন চলবে।
বিপরীতে বাংলাদেশ চাইবে ভারতের রেলপথ
অনেকটা বিনিময় সুবিধার ভিত্তিতে ভারত এই রেলপথ নিতে চাইছে। সহজ পথে ভুটানের কাছে যেতে চায় ভারত। আবার বাংলাদেশকেও ভুটানের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে ভারত। কিন্তু ভারতের ডালগাঁও পর্যন্ত রেললাইন ব্যবহারের সুযোগ দিতে চাচ্ছে ভারত সরকার। কিন্তু বাংলাদেশ চাচ্ছে সেখান থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে হাসিমারা পর্যন্ত যেতে। আবার হাসিমারা স্টেশনের কাছে ভুটানের স্থলবন্দর আছে, যার নাম ফুশিলং। যদি এই স্থলবন্দর পর্যন্ত যাওয়া যায় তাহলে ট্রান্সশিপমেন্ট করে ট্রেন থেকে পণ্য খালাস করে ট্রাকে ভুটানে নেয়া যাবে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- আজ প্রকাশ SSC Board Challenge Result 2025: কখন কোথায় কিভাবে রোল দিয়ে দেখবেন
- আজ এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ ২০২৫ এর ফল প্রকাশ, ঘরে বসে দেখবেন যেভাবে
- SSC Board Challenge Result: কবে ও কোথায় পাবেন, রোল দিয়ে দেখুন
- SSC Board Challenge Result 2025 প্রকাশ: জানুন কলেজ ভর্তি ও ফল আপডেটের নিয়ম
- SSC Board Challenge Result 2025: ১০ আগস্ট ফল প্রকাশ ঘরে বসেই দেখবেন যেভাবে
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া: ৩০ মিনিটেই দুই গোল
- শুরু বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচ: খেলাটি লাইভ দেখুন এখানে
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া: পেনাল্টি থেকে ৯০ মিনিটের খেলা শেষ
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া লড়াই: ম্যাচটি লাইভ দেখার সহজ উপায় ও সময়সূচি
- ‘জেড’ ক্যাটাগরির দুই কোম্পানির শেয়ারে বাজিমাত
- বাংলাদেশ বনাম তিমুর লেস্তে: ৯০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ ২০২৫: ফল প্রকাশ আগামীকাল, যেভাবে ঘরে বসে দেখবেন
- ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত
- শেয়ারবাজারে কঠোর পদক্ষেপ ও কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে বিএসইসি
- এসএসসি রেজাল্ট বদল: মেধাতালিকা, পছন্দক্রম ও ভর্তির নিয়ম