ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বাংলাদেশিসহ বিদেশি কর্মীদের জন্য বিশাল দু:সংবাদ

পর্তুগালের নতুন সরকার সম্প্রতি একটি কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশটিতে কাজের ভিসা ছাড়া বিদেশি কর্মীদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এই নীতি পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে যারা পর্তুগালে যেতে চান, তাদের অবশ্যই বৈধ ভিসা নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায়, তারা আর সেখানে থেকে নিয়মিত হওয়ার কোনো সুযোগ পাবেন না। এই নিষেধাজ্ঞা পর্তুগালের অভিবাসন নীতিতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এর ফলে দেশটির অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পর্তুগালের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ, এবং পর্যটন খাতে। এই খাতগুলিতে কম খরচে দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে অভিবাসীকর্মীরা বড় ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু কাজের ভিসা ছাড়া অভিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ফলে এই খাতগুলোতে কর্মী সংকট দেখা দিতে পারে। এতে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে এবং ব্যবসায়িক খরচ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই নীতিগত পরিবর্তন হঠাৎ করেই ঘোষণা করা হয়েছে, যা অনেকের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। পর্তুগালের অভিবাসন নীতির প্রধান উপমন্ত্রী রুই আর্মিন্দো ফ্রাইটাস বলছেন, এই পরিবর্তন ইউরোপীয় বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
কিন্তু এনজিও প্রতিনিধিরা বলছেন, ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করা ডানপন্থী শক্তির চাপেই সরকার দেশটির অভিবাসন নীতিকে কঠোর করেছে।
ফ্রাইটাস বলেছেন, অনিয়মিত পথে দেশে ঢোকার সুযোগ এবং তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে অনেক অনিয়মিত অভিবাসী শ্রমিকরা পর্তুগালের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন।
তিনি বলেন, এই সুযোগটি দ্রুত বন্ধ করা উচিত, কারণ অভিবাসন সংস্থা এআইএমএ জানিয়েছে এখনো নিয়মিতকরণ বিষয়ক প্রায় ৪০ হাজার আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
ফ্রাইটাস আরো বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষায় থাকা আবদেনগুলোর মধ্যে অনেকগুলো জমা হয়েছে অন্তত দুই বছর আগে। এই ব্যাকলগ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করা উচিত। বহু বছর ধরে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি।
অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসী শ্রমিক
পর্তুগালের অর্থনীতি মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে কৃষি খাত এবং নির্মাণ শিল্পে। এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা শ্রমিকরা কৃষি কাজে নিযুক্ত থাকেন, যেমন ব্রোকলি, জলপাই এবং বেরি বাছাইয়ের কাজ। অন্যদিকে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শ্রমিকরা নির্মাণ খাতে কাজ করেন। হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট খাতে বেশিরভাগ ব্রাজিলিয়ান অভিবাসী কাজ করছেন। এই শ্রমিকদের কম মজুরিতে কঠিন কাজ করা দেশটির অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
পর্তুগিজ কৃষক সমিতির মহাসচিব লুইস মিরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবসম্মত নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্য সময়গুলোতে না হলেও ফসল কাটার সময় আমাদের অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যেন অভিবাসী কর্মীরা দ্রুত এবং অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়া পর্তুগালে আসতে পারেন।
পর্তুগালের অর্থনীতি অনেকটাই অভিবাসী কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের বেশিরভাগ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন এবং কৃষিতে নিযুক্ত হন। এসব কর্মীদের কম মজুরিতে ব্রোকলি, জলপাই সংগ্রহ করা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য বেরি বাছাইয়ের কাজ দেওয়া হয়। হোটেল, রেস্টুরেন্ট কিংবা পর্যটন শিল্পে কাজ করেন ব্রাজিলিয়ানরা। আর নির্মাণ খাতে কাজ করেন মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শ্রমিকরা।
ডানপন্থীদের চাপে এমন সিদ্ধান্ত
পর্তুগালের নতুন অভিবাসন নীতির পেছনে ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ অন্যতম কারণ। বিশেষ করে অতি-ডানপন্থী দল শেগা অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর নীতির দাবি জানিয়ে আসছে এবং এর ফলে তারা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দলটি অভিবাসন সীমিত করার জন্য গণভোটের আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অভিবাসন নীতির পরিবর্তন আসলে বিদেশি কর্মীদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। উপমন্ত্রী রুই আর্মিন্দো ফ্রাইটাস জানান, “আমরা কম অভিবাসী চাই না, বরং নীতিমালা স্পষ্ট করতে চাই, যেন ডানপন্থী শক্তি এই ইস্যুতে সমালোচনা করতে না পারে।”
উপমন্ত্রী রুই আর্মিন্দো ফ্রাইটাস অবশ্য ডানপন্থিদের চাপকে খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না। তিনি বলছেন, সরকার কম অভিবাসী চায় বিষয়টি এমন নয়। তবে শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার নীতিমালা চায় সরকার, যেন ডানপন্থি শক্তি এই ইস্যুটিকে তাদের প্রচারে ব্যবহারের সুযোগ না পায়।
পর্তুগালের অভিবাসন নীতি বিষয়ক প্রধান মনে করেন, অভিবাসন নীতির এই পরিবর্তন পর্তুগালে আসা মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, যারা আসেন তাদের সমাজে একীভূত করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিদেশি কর্মী প্রয়োজন। নতুন নিয়মগুলো যারা এ দেশে আসবেন এবং যারা এরই মধ্যেই এখানে বসবাস করছেন, তাদের সবার উপকারে আসবে।
অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা বাড়বে?
অভিবাসন নীতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে ফ্রাইটাস বলেন, এটি মানবপাচারকারী চক্রের শিকার থেকে অভিবাসীদের রক্ষা করবে।
পর্তুগালে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়ে করা আবেদনের সংখ্যা গত তিন মাসে প্রায় এক চতুর্থাংশ কমে গেছে। এনজিওগুলো বলছে, অনেক বিদেশিকর্মী অনিয়মিতভাবে দেশটিতে আসছেন।
অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন সলিদারিয়েদেদে ইমিগ্রান্তের (সোলিম) আলবার্তো মাতোস বলেন, খামার এবং রেস্তোরাঁর শ্রমিকেরা আসছেন, কারণ দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে তাদের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, যদি এসব অভিবাসীরা পর্তুগালে আসার পর তাদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া না হয় অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তেই থাকবে।
তিনি শঙ্কা জানিয়ে বলেন, সরকারের নেয়া নতুন অভিবাসন নীতি হিতে বিপরীত হতে পারে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- আজ প্রকাশ SSC Board Challenge Result 2025: কখন কোথায় কিভাবে রোল দিয়ে দেখবেন
- আজ এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ ২০২৫ এর ফল প্রকাশ, ঘরে বসে দেখবেন যেভাবে
- SSC Board Challenge Result 2025 প্রকাশ: জানুন কলেজ ভর্তি ও ফল আপডেটের নিয়ম
- SSC Board Challenge Result 2025: ১০ আগস্ট ফল প্রকাশ ঘরে বসেই দেখবেন যেভাবে
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া: ৩০ মিনিটেই দুই গোল
- শুরু বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচ: খেলাটি লাইভ দেখুন এখানে
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া: পেনাল্টি থেকে ৯০ মিনিটের খেলা শেষ
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া লড়াই: ম্যাচটি লাইভ দেখার সহজ উপায় ও সময়সূচি
- এসএসসি রেজাল্ট বদল: মেধাতালিকা, পছন্দক্রম ও ভর্তির নিয়ম
- ‘জেড’ ক্যাটাগরির দুই কোম্পানির শেয়ারে বাজিমাত
- এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ ২০২৫: ফল প্রকাশ আগামীকাল, যেভাবে ঘরে বসে দেখবেন
- শেয়ারবাজারে কঠোর পদক্ষেপ ও কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে বিএসইসি
- শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান শাহিনসের মধ্যকার ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত
- আবারো ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা