শেখ হাসিনার পতনে গ্রামের চিত্রপট বদলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলের গ্রাম থেকে শহরতলী—সবখানেই এখন এক নতুন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। শেখ হাসিনার শাসনের অবসানের পর রাজনীতি যেমন ঢাকায় পাল্টেছে, তেমনি বদলেছে গ্রামের আঙিনায়ও। রাজশাহীর শহর ও আশপাশের ইউনিয়ন, পৌরসভা ও গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ আজ রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা—তবে পরাজিতদের মনের ভিতরে এখনো পুঞ্জীভূত রয়েছে বিস্ময়, ব্যথা ও আত্মসম্মানের তাগিদ।
নেতারা দূরে, মাঠে শুধু কর্মীরা
বর্তমানে মাঠে আওয়ামী লীগের কোনো প্রভাবশালী নেতা নেই। বেশিরভাগই দেশ ছেড়েছেন, অনেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ সীমিত—মেসেজ, ফোনকল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোথায় আছেন, কী অবস্থায় আছেন—সেসবের উত্তর নেই। তবু তৃণমূল কর্মীরা নিজেদের মতো করেই সংগঠনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
সমর্থনে যুক্তির ঘাটতি, তবু অনুগত
একটি বড় সামাজিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা শেখ হাসিনার সমালোচনা নিতে রাজি নন। বরং কেউ সমালোচনা করলে তাঁরা পাল্টা যুক্তি দাঁড় করাতে ব্যস্ত হন, যদিও সেসব যুক্তিতে বাস্তবতা খুব কমই প্রতিফলিত হয়। একজন উপজেলা পর্যায়ের নেতা বললেন, "শেখ হাসিনার সমালোচনা করা এখন ট্রেন্ড হয়ে গেছে। অথচ বিএনপির সমর্থকেরা কখনো তারেক রহমানের বিরুদ্ধাচরণ করে না।" এই মানসিকতা রাজনীতিকে যুক্তির জায়গা থেকে আবেগের জায়গায় ঠেলে দিয়েছে।
‘গণ–অভ্যুত্থান’ শুধু শহরে, গ্রামে শুধু ‘পরিবর্তন’
জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থান ঢাকায় যতটা আলোড়ন তুলেছিল, গ্রামের মাটিতে তার আবেগ ও আদর্শ তেমনভাবে পৌঁছায়নি। এখানকার মানুষ শেখ হাসিনার পতনকে পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখছে ঠিকই, কিন্তু তা রাজনৈতিক রোমাঞ্চের নয়, বরং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার আশায়। ফলে বিএনপি ও জামায়াত এখানে ‘ভবিষ্যতের শক্তি’ হিসেবে জায়গা নিচ্ছে, যদিও তাদের নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
এনসিপি: প্রেশার গ্রুপ হলে ভালো হতো?
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অভিমত হলো, দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ না করে তারা যদি নাগরিক প্রেশার গ্রুপ হতো, তাহলে হয়তো গ্রহণযোগ্যতা বেশি হতো। অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করে নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকতে চাওয়ায় তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গ্রামের রাজনীতিতে নতুন শক্তি ঢোকা খুব সহজ নয়—এখানে সম্পর্ক আর সুবিধাভোগের রাজনীতি গভীরভাবে প্রোথিত।
পোশাক বদলে নিরাপত্তা, পরিচয়ে লুকোনো আশ্রয়
মাঠে দেখা গেছে এমন অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক, যাঁরা এখন টুপি-পাঞ্জাবি পরে চলাফেরা করেন। কেউ কেউ নিয়মিত নামাজে যাচ্ছেন, সামাজিক মর্যাদা পেতে ধর্মীয় পরিচয়ের আশ্রয় নিচ্ছেন। তাঁদের মতে, এতে নিরাপত্তা যেমন বাড়ছে, তেমনি মানুষও সম্মান দেখাচ্ছে।
রাজনৈতিক বদল মানেই জীবনের পরিবর্তন
পরিবর্তন শুধু রাজনৈতিক নয়, এর বাস্তব প্রভাব পড়ছে কৃষি, ব্যবসা ও সাধারণ জীবিকায়। রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় বেশিরভাগ গভীর নলকূপের অপারেটর বদলে গেছে। বিএনপি–জামায়াতপন্থিরা এখন নতুন নিয়োগে আসীন, আর অভিযোগ উঠছে এই পদ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। নলকূপ কেবল পানি নয়, ক্ষমতার উৎস—এটা নতুন করে সবাই টের পাচ্ছে।
‘পরাজয়’ শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকও
একজন আওয়ামী সমর্থক জানালেন, রাজনীতি করার অপরাধে এখন তাঁকে মামলা ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। মামলা থেকে বাঁচতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে চাঁদা দিয়েছেন প্রতিপক্ষ নেতাদের। এখন সেই ঋণের কিস্তি চালাতে গিয়ে নাজেহাল। রাজনৈতিক পতনের পর আর্থিক নিরাপত্তা হারানো যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক, তা মাঠে অনেকেই বলছেন।
প্রতিশোধের রাজনীতি: বিপজ্জনক প্রবণতা
৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিশোধমূলক আঘাত বেড়েই চলেছে। মামলা, সামাজিক বয়কট, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া, এমনকি শারীরিক হুমকি—সব মিলিয়ে প্রতিশোধ এখন যেন জয়ের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। অথচ সত্যিকারের বিজয় তখনই হয়, যখন বিজিতের ওপর অনাচার নয়, সৌজন্য থাকে। বিজয়ীদের অহংকার এখন জনবিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে।
মানুষ চায় স্বস্তি, উন্নয়ন নয়
এই পুরো সময়জুড়ে সবচেয়ে বড় কথা বারবার উঠে এসেছে—মানুষ উন্নয়ন নয়, চায় স্বস্তি। তারা শেখ হাসিনাকে সরিয়েছে শুধু উন্নয়নের অভাবের কারণে নয়, বরং নিরাপত্তা, মর্যাদা ও স্বস্তির আকাঙ্ক্ষায়। নতুন সরকার সেই চাহিদা পূরণে কতটা সফল হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই সময়ে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হচ্ছে শুধু দলের নেতৃত্ব দিয়ে নয়, বরং জনগণের আশা-নিরাশার বাস্তবতায়। গ্রাম যে এখনো ‘ভোটব্যাংক’ শুধু নয়, বরং পরিবর্তনের স্পর্শকাতর ক্ষেত্র—তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর এই ক্ষেত্রকে অবহেলা করলে কোনো রাজনীতিই টিকবে না। গ্রামও এখন চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে—"আমাদের কী দেবে নতুন রাজনীতি?"
মোঃ ফরহাদ রেজা/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে এবার বড় সিদ্ধান্ত নিল বিএসইসি
- দেশের বাজারে ইতিহাস গড়ে কমলো সোনার দাম, জেনেনিন বাজার মূল্য
- বাংলাদেশে ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার মূল্য তালিকা
- সিলেটে ক্রিকেট মাঠে শোকের ছায়া: বিসিবি কর্মকর্তার অকাল মৃত্যু
- অভিনেতা সিদ্দিককে পিটিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রদল কর্মীরা
- বাংলাদেশ স্কোয়াডে দুই পরিবর্তন, আসছে এক চেনা মুখ ও এক নতুন নাম
- ৬ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা, কারা কত শতাংশ দিচ্ছে
- মার্জিন রুলস ১৯৯৯-এ বড় পরিবর্তন: পুঁজিবাজারের নতুন দিগন্ত
- বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করলেন হাসানত আব্দুল্লাহ
- ১১ কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ: কার লাভ, কার ক্ষতি?
- শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল বিএসইসি
- বাঁচাও শেয়ারবাজার’: বিনিয়োগকারীদের গর্জনে কাঁপলো মতিঝিল
- বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন
- রিয়াল বনাম বার্সা ফাইনাল: কখন, কোথায়, কিভাবে দেখবেন আজ রাতে
- বিনিয়োগকারীদের জন্য ৭ কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা