ঢাকা, সোমবার, ৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর: সীমিতভাবে চালু আমিরাতের ভিসা

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মে ০৪ ১৭:৫৬:৫৬
বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর: সীমিতভাবে চালু আমিরাতের ভিসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত পরিসরে আবারও চালু হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভিজিট ভিসা। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলি আলহামুদি জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা হচ্ছে।

রোববার রাজধানীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ তথ্য জানান রাষ্ট্রদূত। সাক্ষাৎকালে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক, ভিসা নীতিমালা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।

কূটনৈতিক তৎপরতায় ফিরে এলো আশার আলো

রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের মধ্যে ধারাবাহিক ও ফলপ্রসূ কূটনৈতিক আলোচনার ফলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশের বিশেষ দূতের সক্রিয় সম্পৃক্ততায় একাধিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে বিনিয়োগ, শ্রমবাজার, ভিসা সহজীকরণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গঠনমূলক আলোচনা হয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য এখন শুধু ভিজিট ভিসাই নয়, ব্যবসায়িক গ্রুপ ভিসার প্রসেসিংও দ্রুততর করা হয়েছে। এতে করে ব্যবসায়িক সম্পর্ক যেমন বাড়বে, তেমনি দু’দেশের মধ্যে জনসম্পর্কও আরও দৃঢ় হবে।

দক্ষ কর্মীদের জন্য খুলেছে নতুন সুযোগ

বিশেষ দূতের সঙ্গে আলোচনায় রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ইউএই-এর মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য পুনরায় অনলাইন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া চালু করেছে। এর আওতায় বিপণন ব্যবস্থাপক, হোটেল খাতের কর্মী ও নিরাপত্তা প্রহরীদের জন্য ইতিমধ্যে ভিসা ইস্যু শুরু হয়েছে।

নিরাপত্তা পেশাজীবীদের জন্য ইতোমধ্যে ৫০০টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে এবং আরও এক হাজার ভিসা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ভিসা ইস্যুর এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভবিষ্যতে আরও শিথিল হবে ভিসা নীতিমালা

রাষ্ট্রদূত আলহামুদি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশ সরকার যেসব মানবিক ও সহানুভূতিশীল অনুরোধ জানাবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত নমনীয় অবস্থান বজায় রাখবে। আমরা ধাপে ধাপে ভিসা সীমাবদ্ধতা শিথিল করতে আগ্রহী।”

এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য যেমন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে বলেও মত বিশ্লেষকদের।

দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে নতুন গতি

বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এই অগ্রগতিকে সময়োপযোগী ও আশাজাগানিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি রাষ্ট্রদূতের উন্মুক্ততা ও আন্তরিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং জানান, বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (Comprehensive Economic Partnership Agreement - CEPA) নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এর টার্মস অব রেফারেন্সে ইতোমধ্যেই উভয় দেশ সম্মত হয়েছে।

এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের বাণিজ্যিক, বিনিয়োগ ও শ্রমবাজার সংক্রান্ত সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছে ইউএই প্রতিনিধি দল

আলোচনার শেষে রাষ্ট্রদূত জানান, চলতি মাসের শেষ দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উচ্চপর্যায়ের একটি মন্ত্রিপরিষদ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে। এই সফরকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পরবর্তী ধাপে নতুন গতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: বাংলাদেশিদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কোন ধরণের ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে?

উত্তর: বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিজিট ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি ভিসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন ২: ইউএই কি অন্য কোনো পেশার জন্য ভিসা দিচ্ছে?

উত্তর: হ্যাঁ, বিপণন ব্যবস্থাপক, হোটেল কর্মী ও নিরাপত্তাপ্রহরীদের জন্য ইতোমধ্যে ভিসা ইস্যু শুরু হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ৫০০টি ভিসা দেওয়া হয়েছে এবং আরও ১,০০০ ভিসা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রশ্ন ৩: ব্যবসায়িক ভিসার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি?

উত্তর: ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের জন্য গ্রুপ ভিসা প্রসেসিং দ্রুততর করা হয়েছে, যা ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

প্রশ্ন ৪: দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা আবেদন কিভাবে করা যাবে?

উত্তর: ইউএই মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় দক্ষ কর্মীদের জন্য অনলাইনে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করেছে। প্রার্থীরা অনলাইনে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন।

প্রশ্ন ৫: ভবিষ্যতে কি ভিসা সীমাবদ্ধতা আরও শিথিল হবে?

উত্তর: রাষ্ট্রদূতের ভাষ্য অনুযায়ী, ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমাবদ্ধতা শিথিল করা হবে। মানবিক ও সহানুভূতিশীল আবেদনগুলোর ক্ষেত্রে ইউএই নমনীয় অবস্থান বজায় রাখবে।

প্রশ্ন ৬: ইউএই-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক কি আরও বাড়বে?

উত্তর: দুই দেশের মধ্যে CEPA (Comprehensive Economic Partnership Agreement) নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং উভয় দেশ টার্মস অব রেফারেন্সে একমত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।

প্রশ্ন ৭: ইউএই থেকে প্রতিনিধি দল কবে বাংলাদেশে আসছে?

উত্তর: চলতি মে মাসের শেষদিকে ইউএই সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি মন্ত্রিপরিষদ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ