ঢাকা, রবিবার, ৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

বিমা খাতে ডিভিডেন্ডে ভাটা, ১০ কোম্পানির কাটছাঁট

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মে ০৪ ২৩:২৩:৪৫
বিমা খাতে ডিভিডেন্ডে ভাটা, ১০ কোম্পানির কাটছাঁট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ডিএসই তালিকাভুক্ত ১১ কোম্পানির ঘোষণা আগের বছরের তুলনায় কম

২০২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে বিমা খাতে দেখা দিয়েছে এক ধরনের মিতব্যয়ী মনোভাব। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৫৮টি বিমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৩০টি কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৫টির ডিভিডেন্ড বেড়েছে, ১৫টির অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ১১টি কোম্পানি আগের বছরের তুলনায় কম পরিমাণ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র বলছে, এসব কোম্পানির ডিভিডেন্ড হ্রাস পাওয়ার ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মনে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়, পরিচালন দক্ষতা ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে। বিশেষ করে ক্যাশ ফ্লো বা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (RoI) যদি নিম্নমুখী হয়, তবে ভবিষ্যতের লাভ ও ডিভিডেন্ডও চাপের মুখে পড়তে পারে।

ডিভিডেন্ড কমেছে যেসব কোম্পানির

২০২৪ অর্থবছরে যেসব কোম্পানি আগের বছরের তুলনায় কম ডিভিডেন্ড দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে বেশ কিছু পরিচিত নাম। নিচে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর বর্তমান ও পূর্ববর্তী অর্থবছরের ডিভিডেন্ডের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো:

ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স: ১৫ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ছিল ২০ শতাংশ। ডিভিডেন্ড কমেছে ৫ শতাংশ।

এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স: ৫ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ৭ শতাংশ। হ্রাস ২ শতাংশ।

এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স: ১০ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ১২ শতাংশ। কমেছে ২ শতাংশ।

কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স: ৫ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টকসহ মোট ১০ শতাংশ। কমেছে ৫ শতাংশ।

ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স: ১২ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ৭ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টকসহ মোট ১৭ শতাংশ। কমেছে ৫ শতাংশ।

সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স: ১০ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ১২ শতাংশ। কমেছে ২ শতাংশ।

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স: ২৫ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ২০ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টকসহ মোট ৩০ শতাংশ। কমেছে ৫ শতাংশ।

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স: ১০ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ১২.৫০ শতাংশ। কমেছে ২.৫০ শতাংশ।

রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স: ৬ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ১১ শতাংশ। কমেছে ৫ শতাংশ।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্স: ১০ শতাংশ ক্যাশ, আগের বছর ১২ শতাংশ। কমেছে ২ শতাংশ।

বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

ডিভিডেন্ড কমানোর কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিলেও, বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন কয়েকটি বিষয় এর পেছনে থাকতে পারে।

প্রথমত, ২০২৪ সালে বিমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ে স্থবিরতা ছিল, বিশেষ করে লাইফ ও নন-লাইফ বিমা উভয় ক্ষেত্রেই। দ্বিতীয়ত, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্লেইম স্যাটেলমেন্ট ব্যয় বেড়ে গেছে, যা কোম্পানির নিট আয়কে প্রভাবিত করেছে। তৃতীয়ত, কিছু কোম্পানি হয়তো রিজার্ভ গঠনের দিকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় অর্থ রেখে চলতি বছরের ডিভিডেন্ড কমিয়েছে।

অনেক বিনিয়োগকারী ডিভিডেন্ড কমে যাওয়া দেখে হতাশ হলেও, কিছু বিশ্লেষকের মতে এটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার লক্ষণও হতে পারে, যদি তা হয় সচেতন আর্থিক পরিকল্পনার অংশ।

ডিভিডেন্ডে ছাঁটাই হলেও খাতটিতে আকর্ষণ আছে

যদিও চলতি বছর বেশ কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ড কমিয়েছে, তবুও বিমা খাত এখনো তুলনামূলকভাবে উচ্চ রিটার্ন প্রদানকারী খাতগুলোর একটি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী, তাদের জন্য বিমা খাত এখনো সম্ভাবনাময়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিভিডেন্ড হার একা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। কোম্পানির মৌলিক শক্তি, বাজার প্রবণতা, লভ্যাংশ দেওয়ার ধারাবাহিকতা এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও বিবেচনায় নিতে হবে।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ