ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়ছে, জানুন বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা কেমন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১০ ২৩:১৯:০৯
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়ছে, জানুন বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা কেমন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আকাশে যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে উপমহাদেশে, বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত ড্রোন ও মিসাইল হামলার বিরুদ্ধে?

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এখন পুরো উপমহাদেশজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে মিসাইল, ড্রোন ও বিমান হামলা পাল্টাপাল্টি আকার নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—যদি এই উত্তেজনা বিস্তৃত হয়, তাহলে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

স্বাধীনতার পর আকাশ প্রতিরক্ষা যাত্রা

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন থেকেই দেশের আকাশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব এই বাহিনীর ওপর। কিন্তু ৫৩ বছর পর, প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিমান বাহিনী কতটা আধুনিক হয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।

বর্তমানে বিমান বাহিনী "ফোর্সেস গোল ২০৩০" প্রকল্পের আওতায় বিমান ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আধুনিকায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান বহর

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে রয়েছে প্রায় ৪৪টি যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য:

চীনের তৈরি F-7MB ও BG যুদ্ধবিমান – ৩৬টি

রাশিয়ার তৈরি MiG-29 – ৮টি

কমব্যাট ট্রেনিং এয়ারক্রাফট: Yak-130 (রাশিয়ার তৈরি) – ১২টি, যা হালকা যুদ্ধেও ব্যবহৃত হয়

এই সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম এবং আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকেও পিছিয়ে।

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে কার্যকর একমাত্র ব্যবস্থা হলো:

চীনের তৈরি FM-90

স্বল্পপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল

দুটি রেজিমেন্ট এই ব্যবস্থা পরিচালনা করছে

টার্গেট রেঞ্জ: ৭০০ মিটার থেকে ১৫ কিলোমিটার

উচ্চতা: ১৫ মিটার থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত

তবে এই রেঞ্জ ও উচ্চতা আধুনিক যুদ্ধের ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল বা স্টিলথ এয়ারক্রাফটের হুমকি মোকাবেলায় যথেষ্ট নয়।

রাডার ও নজরদারি ব্যবস্থা

আধুনিক যুদ্ধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাডার প্রযুক্তি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বেশ কিছু উন্নত রাডার স্থাপন করেছে:

JY-11B, JH-6, YLC-6

আকাশে হুমকি শনাক্ত ও ট্র্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত

ড্রোন শনাক্ত করতে সক্ষম

এছাড়া, কাউন্টার-ড্রোন সার্ভেইলেন্স সিস্টেম ক্রয়ের উদ্যোগও চলছে।

আধুনিক প্রতিরক্ষা কেনার পরিকল্পনা

বাংলাদেশ বর্তমানে:

মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট কেনার বিষয়ে পরিকল্পনা করছে।

মাঝারি ও দূরপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল কেনার আলোচনাও চলছে।

এসব বাস্তবায়িত হলে আকাশ প্রতিরক্ষার চেহারায় বড় পরিবর্তন আসবে।

বাংলাদেশের নীতি: আক্রমণ নয়, আত্মরক্ষা

বাংলাদেশ সবসময় আক্রমণাত্মক নয়, আত্মরক্ষামূলক সামরিক নীতিতে বিশ্বাস করে। যুদ্ধবিমুখ এ দেশ কখনোই অন্য দেশের সঙ্গে উত্তেজনায় জড়াতে চায় না। তবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকলে বহিঃশত্রুর জন্য ঝুঁকি থেকেই যায়।

বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ভারত-পাকিস্তানের চলমান সংঘাত আমাদের আকাশ নিরাপত্তার বিষয়টিকে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন সময়, প্রশ্নের জবাবের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: বাংলাদেশ বর্তমানে কী ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে?

উত্তর: বাংলাদেশ মূলত চীনের F-7 সিরিজ, রাশিয়ার MiG-29 ও Yak-130 হালকা যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে।

প্রশ্ন ২: বাংলাদেশ আকাশ প্রতিরক্ষায় কোন মিসাইল ব্যবহার করে?

উত্তর: বর্তমানে বাংলাদেশ FM-90 নামের স্বল্পপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ব্যবহার করছে।

প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা কি ড্রোন হামলা মোকাবেলা করতে পারে?

উত্তর: আংশিকভাবে পারে, তবে উন্নত ড্রোন মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আরও আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে হবে।

প্রশ্ন ৪: আঞ্চলিক উত্তেজনার সময় বাংলাদেশের নীতিমালা কী?

উত্তর: বাংলাদেশ আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা নীতিতে বিশ্বাস করে, আক্রমণাত্মক নয়।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ