ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

আস্থা ফেরাতে শেয়ারবাজারে জরুরি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৩ ১৬:১৫:৪০
আস্থা ফেরাতে শেয়ারবাজারে জরুরি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তারল্য সংকট, আস্থার ঘাটতি ও বাজারের স্থবিরতায় দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটে নাজেহাল। একদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি, অন্যদিকে নেগেটিভ ইক্যুইটি আর তারল্য সংকট—সব মিলিয়ে বাজার এখন এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

এই বাস্তবতায় সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেয়ারবাজার উন্নয়নে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, যা বাজারে আশার সঞ্চার করলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দ্রুততা দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ দফা নির্দেশনা:

সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা

কর-প্রণোদনা দিয়ে সম্ভাবনাময় দেশীয় কোম্পানিকে বাজারমুখী করা

বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৩ মাসে কার্যকর সংস্কার

দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা

বড় কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের বদলে বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহিত করা

এসব পরিকল্পনা মূলত দীর্ঘমেয়াদি ও কাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হলেও, বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন—এখন সময় তাৎক্ষণিক ও বাস্তবভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার।

দীর্ঘ পরিকল্পনায় আস্থা ফেরে না, দরকার তাত্ক্ষণিক সাড়া

ঢাকার এক ব্রোকার হাউসে ক্ষুব্ধ এক খুচরা বিনিয়োগকারী বলেন,

“দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। আমরা চাই এখনই বাজারে পরিবর্তন আসুক।”

একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা যুক্ত করেন,

“যত বড় পরিকল্পনাই হোক, যদি বাস্তবায়ন না হয়, তবে বাজারে আস্থা ফিরে আসবে না।”

বাজার ঘুরে দাঁড়াতে যেসব স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ জরুরি:

বাজার বিশ্লেষক, ব্রোকার ও বিনিয়োগকারীদের মতামতের ভিত্তিতে নিচের কার্যকর স্বল্পমেয়াদি

পদক্ষেপগুলোকে এখনই বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে:

সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করা

বাজার স্থিতিশীল করতে বিশেষ তহবিল (Market Stabilization Fund) বাড়ানো

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমা বাস্তবায়নে নমনীয়তা

নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্গঠিত প্যাকেজ

বাই-ব্যাক আইন দ্রুত কার্যকর করা

বাস্তবায়নের গতি ছাড়া আস্থা ফিরবে না

বাজার সংশ্লিষ্টরা একমত, শুধু সুপারিশ নয়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই রয়েছে বড় দুর্বলতা। এ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় এবং স্বচ্ছ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাড়বে অবিশ্বাস

বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো গেলে তারা আবারও বাজারমুখী হবেন। না হলে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে পারে।

শেয়ারবাজারে কাঠামোগত সংস্কার সময়ের দাবি হলেও, বিনিয়োগকারীর আস্থা ফেরাতে এখনই প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ। নয়তো দিনের পর দিন বাজারে ক্ষয়িষ্ণু প্রবণতা গভীরতর হবে, এবং পুনরুদ্ধারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: শেয়ারবাজারে কী ধরনের স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ জরুরি?

উত্তর: সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো, বিশেষ তহবিল বৃদ্ধি, বাই-ব্যাক আইন কার্যকর করা ও নেগেটিভ ইক্যুইটিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্যাকেজ চালু করা—এসব পদক্ষেপ জরুরি।

প্রশ্ন ২: দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কি বাজারের বর্তমান সংকট সমাধানে যথেষ্ট?

উত্তর: না, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন হলেও বাজারে তাৎক্ষণিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে স্বল্পমেয়াদি কার্যকর উদ্যোগ অপরিহার্য।

প্রশ্ন ৩: বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কী দরকার?

উত্তর: বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ, দ্রুত নীতিগত পরিবর্তন এবং বাজারে ইতিবাচক সাড়া—এই তিনটি আস্থার মূল চাবিকাঠি।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ