ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

৩০০ কোটির নিচে নেমে গেল লেনদেন, শেয়ারবাজারে ফের ধস

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৪ ১৬:০২:২৫
৩০০ কোটির নিচে নেমে গেল লেনদেন, শেয়ারবাজারে ফের ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার যেন পড়েছে এক গভীর হতাশার ঘূর্ণিতে। প্রতিদিনের মতো আজও (১৪ মে, বুধবার) বাজার খুলেছে অনিশ্চয়তা আর চাপা উৎকণ্ঠা নিয়ে। সূচকে ছিল না উজ্জ্বল কোনো ভোরের আলোর আভাস—বরং দিনের শুরুতেই ভর করেছে নেতিবাচক সুর। বিনিয়োগকারীদের মুখে ছিল উদ্বেগের ছায়া, আর হাত ছিল বিক্রির বাটনে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজকের লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০ কোটির নিচে, মাত্র ২৯৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে অন্যতম নিম্নমুখী পরিসংখ্যান। লেনদেনের এমন হ্রাস এবং সূচকের একটানা পতন বাজারে আস্থা সংকটের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

সূচকে ছন্দপতন, বিনিয়োগে ভরসার খরা

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ কমেছে ৩৮.৯৭ পয়েন্ট, থেমেছে ৪,৮৩৫ পয়েন্টে।

ডিএসই শরীয়াহ সূচক হারিয়েছে ১০.৩৫ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ১,০৫৩ পয়েন্টে,

আর ডিএসই-৩০ সূচক নেমেছে ৭.৬০ পয়েন্ট, পেছনে গিয়ে ঠেকেছে ১,৭৯১ পয়েন্টে।

দিনভর সূচকের হঠাৎ উঁকি ঝুঁকির চেষ্টা সত্ত্বেও সেল প্রেসারের ভারে তা টিকতে পারেনি। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা যেন সূচকের ঘাড় চেপে ধরেছে।

দরপতনের পেছনে সংখ্যার গল্প

আজ ডিএসইতে ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬১টির দর বেড়েছে, বিপরীতে ২৯২টির দর কমেছে, অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টি। এক কথায়, উর্ধ্বমুখী চিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে ক্ষীণ রশ্মির মতো।

আগের দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার। তুলনামূলক বিশ্লেষণে বোঝা যায়, এক দিনের ব্যবধানেই বাজার হারিয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সক্রিয়তা।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের শঙ্কা

বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা ফেরাতে না পারলে, এই পতনের স্রোত আর সহজে থামবে না। তারা মনে করছেন, বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিতে হবে দ্রুত এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত।

চট্টগ্রামেও একই গল্প, অন্য ব্যঞ্জনায়

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আজও ছিল সংকোচনের রেখায়। লেনদেন কিছুটা বাড়লেও, সূচকে দেখা গেছে বড় পতন।

আজ সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকার, যা আগের দিনের ৭ কোটি ৬৭ লাখ থেকে কিছুটা বেশি হলেও, আশার আলো দেখাতে পারেনি।

সিএসইর সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) আজ ৭১.৪৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩,৬১৪ পয়েন্টে। আগের দিন এই সূচক কমেছিল ৩৬.৯৩ পয়েন্ট, অর্থাৎ পতনের গতি দ্বিগুণ হয়েছে মাত্র একদিনে।

সিএসইতে আজ ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টির দর বেড়েছে, ১২৭টির কমেছে এবং ২৫টির দর অপরিবর্তিত থেকেছে।

পুনরুদ্ধারে কি এগোবে কেউ?

দেশের শেয়ারবাজার যেন হাঁটছে এক অনিশ্চিত সন্ধ্যার দিকে। প্রতিদিন সূচকের এই ক্ষয়, লেনদেনের এই নিঃস্বতা আর বিনিয়োগকারীদের মুখে ছায়াপাত দিচ্ছে নতুন আশঙ্কার। সময় এসেছে আস্থা ফেরানোর, সময় এসেছে সাহসী নীতিগত হস্তক্ষেপের। নইলে এই অন্ধকার দীর্ঘ হতে পারে আরও অনেক বেশি।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

প্রশ্ন ১: ১৪ মে শেয়ারবাজারে লেনদেন কত টাকায় নেমেছে?

উত্তর: ১৪ মে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৯৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার, যা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সর্বনিম্ন।

প্রশ্ন ২: কয়টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে?

উত্তর: ডিএসইতে আজ ২৯২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে, যা বাজারে বড় ধসের ইঙ্গিত।

প্রশ্ন ৩: সূচক কত পয়েন্ট কমেছে?

উত্তর: ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৩৮.৯৭ পয়েন্ট, ডিএসই শরীয়াহ সূচক কমেছে ১০.৩৫ পয়েন্ট, এবং ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৭.৬০ পয়েন্ট।

প্রশ্ন ৪: বাজারে আস্থা সংকটের কারণ কী?

উত্তর: বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ঘাটতি এবং কার্যকর নীতিনির্ধারণী উদ্যোগের অভাব বাজারে আস্থা সংকট তৈরি করেছে।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ