ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

পিনাকী বললেন: মুস্তাফিজকে নিয়ে ‘বয়কট দিল্লি ক্যাপিটালস’ হিন্দুত্ববাদের ষড়যন্ত্র

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৮ ০১:০৫:০৭
পিনাকী বললেন: মুস্তাফিজকে নিয়ে ‘বয়কট দিল্লি ক্যাপিটালস’ হিন্দুত্ববাদের ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএল-এর দল দিল্লি ক্যাপিটালস বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে চলতি আসরের শেষ ক’টি ম্যাচের জন্য দলে নেয়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র সামাজিক বিতর্ক। এই বিতর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারও উঠে এসেছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক অবস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান মুসলিমবিদ্বেষের প্রসঙ্গ।

বাংলাদেশি রাজনীতিক ও ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টে এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এটা নিছক ক্রিকেট নয়—এটা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহত্তর সাম্প্রদায়িক প্রপাগান্ডার প্রতিচ্ছবি।”

মুস্তাফিজকে ঘিরে বিতর্ক

পিনাকী লিখেছেন, “কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের মুস্তাফিজকে দিল্লি ক্যাপিটালস কিনেছে তাদের এই সিজনের শেষ কয়েকটি ম্যাচ খেলার জন্য। টিমটি খুশি মুস্তাফিজকে পেয়ে। কিন্তু ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা মুস্তাফিজকে ওই টিমে নেয়ার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়াতে চেঁচামেচি শুরু করেছে। চারিদিকে 'বয়কট দিল্লি ক্যাপিটালস' আওয়াজ উঠেছে।”

ভারতের কিছু হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী দাবি তুলেছে, "কোনো বাংলাদেশীকে আইপিএলে নেয়া যাবে না", কারণ বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ ভারতের রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি সমর্থন দেয় না। পিনাকীর ভাষায়, এটি “দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দুত্ববাদের বেড়ে ওঠা, মুসলিমবিদ্বেষ এবং ভারতের ক্রমাগত ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার একটি নিখুঁত উদাহরণ।”

পাকিস্তানের পর এবার বাংলাদেশের পালা?

পিনাকী তার পোস্টে স্মরণ করিয়ে দেন, কিভাবে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের একপ্রকার ‘নিষিদ্ধ’ করে রেখেছে আইপিএল। তার ভাষায়, “প্রথমে তারা পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের আইপিএল থেকে একপ্রকার নির্বাসনে পাঠিয়েছে। ভারতের যুক্তি ছিল নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সমস্যা, কিন্তু আসলে এটা একটি স্পষ্ট মুসলিম বিদ্বেষমূলক অবস্থান।”

এখন সেই প্রবণতা বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে দাবি করেন তিনি। “গত বছর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও আইপিএলে নেয়া কমেছে বা একপ্রকার বন্ধই হয়েছে। যেটুকু নিয়েছে, তা অনেক রাজনৈতিক ছাঁকুনির পর।”

‘হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশিদের উপর ক্ষোভ’

পিনাকী ভট্টাচার্যের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারত সরকারের প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হাসিনার শাসনের পতনের পর ভারতের উগ্র ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলি বাংলাদেশের জনগণের উপর ক্ষোভ ঝাড়ছে।

“শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর থেকে ভারতের ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলি অসন্তুষ্ট। এখন, হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, এই হিন্দু গোষ্ঠীগুলি ক্রিকেটার সহ বাংলাদেশের জনগণ এবং বর্তমান সরকারের উপর তাদের ক্ষোভ বর্ষণ করছে।”

‘ধর্ম দিয়ে হিরোকে ভিলেন বানানো হচ্ছে’

মুস্তাফিজুর রহমান একজন অভিজ্ঞ এবং কার্যকর পেসার, যার আইপিএলে সাফল্যের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র তিনি মুসলিম এবং বাংলাদেশি হওয়ায় তাঁকে ঘিরে যে বিদ্বেষমূলক ট্রেন্ড চালু হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পিনাকী।

তিনি লেখেন, “ক্রিকেটে যারা হিরো ছিলো, তাদের এখন ধর্মের নামে ভিলেন বানানো হচ্ছে। এটাই হিন্দুত্ববাদীদের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র।”

‘ক্রিকেটেও সাম্প্রদায়িকতা’

পিনাকী ভট্টাচার্যর মতে, এই ঘটনা শুধু মুস্তাফিজ নয়—বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্ম ও জাতিগত বিভাজনের রাজনীতিকে আরও উসকে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “এটা মুসলমানবিদ্বেষ, এটা বর্ণবাদ, এটা দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেটকেও বিষাক্ত করে তোলার চেষ্টা। এটা শুধু মুস্তাফিজ বা বাংলাদেশকে নয়—এই অঞ্চলের সকল জাতিগোষ্ঠীর সমতার সম্ভাবনাকেই অপমান করছে।”

সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি

পিনাকীর এই পোস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেকেই তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে মন্তব্য করেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ধর্মীয় বিভাজন দিন দিন গভীর হচ্ছে এবং এর প্রভাব এখন ক্রিকেটসহ অন্যান্য অরাজনৈতিক অঙ্গনেও পড়ছে।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

১. কেন মুস্তাফিজকে নিয়ে দিল্লি ক্যাপিটালস বয়কটের দাবি উঠেছে?

দিল্লি ক্যাপিটালস মুস্তাফিজকে দলে নেওয়ায় কিছু হিন্দুত্ববাদী গ্রুপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বয়কট দিল্লি ক্যাপিটালস’ ট্রেন্ড চালু করেছে। তারা বাংলাদেশি মুসলিম খেলোয়াড়কে আইপিএলে নিতে বিরোধিতা করছে।

২. পিনাকী ভট্টাচার্যের বক্তব্য কী?

পিনাকী বলছেন, মুস্তাফিজ বিরোধী বয়কট শুধু ক্রিকেট নয়, এটি হিন্দুত্ববাদের মুসলিমবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের অংশ।

৩. এর পেছনের মূল কারণ কী?

দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দুত্ববাদের উত্থান, মুসলিমবিদ্বেষ এবং রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের আইপিএল থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

৪. কি পরিণতি হতে পারে?

ক্রিকেটসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন বাড়তে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার শৃঙ্খলিত সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সমতা হুমকির মুখে ফেলবে।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ