ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

একদিনেই বদলে গেল শেয়ারবাজারের চিত্র

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৮ ১৬:৪১:২০
একদিনেই বদলে গেল শেয়ারবাজারের চিত্র

সূচক কমেছে ২৯ পয়েন্ট, বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় নীতিগত বার্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিনের স্বল্পকালীন স্থিতিশীলতা শেষে আবারও নেতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এবং নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে একপক্ষীয় ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বার্তার কারণে বাজারে আবারও বিক্রিচাপ বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা ও অংশীজনদের মতামত উপেক্ষা করার প্রবণতা আস্থার সঙ্কটকে গভীরতর করছে।

গত কর্মদিবসে (১৬ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৯ পয়েন্টের বেশি বেড়েছিল, যা বাজারে স্বল্পমেয়াদী ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে। কিন্তু আজ (১৮ মে, রোববার) লেনদেনের শুরুতে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও মধ্যভাগ থেকে তা নিম্নমুখী হতে থাকে। দিন শেষে প্রধান সূচকটি ২৯.৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪,৭৯১ পয়েন্টে।

সূচকের এই পতনের পেছনে বাজার সংশ্লিষ্টরা দুই ধরনের বার্তার দ্বন্দ্বকে দায়ী করছেন। একদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী উপদেষ্টা ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর ডিএসই পরিদর্শন এবং বিনিয়োগবান্ধব বার্তা বাজারে আশাবাদ তৈরি করে। অন্যদিকে, একইদিন বিকেলে প্রকাশিত বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকের খবর—যেখানে তার অপেশাদার আচরণ এবং মতামত উপেক্ষার অভিযোগ ওঠে—বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিনিয়োগকারীদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় নীতিগত দিকনির্দেশনার অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তিকর বার্তা গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। এক খুচরা বিনিয়োগকারী ফরহাদ হোসেন বলেন, “বাজারে স্থির কৌশলের অভাব এবং নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে স্পষ্ট বার্তার অনুপস্থিতি আমাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।”

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা জানান, “যখন বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারক ভিন্ন ভিন্ন বার্তা দেন, তখন বাজারে স্পষ্টতা না থেকে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল করে।”

বাজার বিশ্লেষণ: ডিএসই

আজকের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯.৩৮ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৪,৭৯১.৩৫ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ৬.৬২ পয়েন্ট কমে হয়েছে ১,০৪৬.৪৮ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮.০১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১,৭৮০.৩৮ পয়েন্টে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ২৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৭টি কোম্পানি। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মোট ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা আগের দিনের ২৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার তুলনায় কিছুটা বেশি।

বাজার বিশ্লেষণ: সিএসই

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ০১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আগের দিন এ পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে মোট ২৩৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৮৮টির, কমেছে ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৮.০৪ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ১৩,৪০৩ পয়েন্টে।

সমাধান ও সুপারিশ

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাজার বিশ্লেষকরা তিনটি কৌশলগত পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন:

১. প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়: অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সুসংহত নীতি বাস্তবায়ন জরুরি।

২. অংশীজন অন্তর্ভুক্তি: বাজার পরিচালনায় অংশীজনদের মতামত গ্রহণ ও সম্মানজনক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৩. বার্তা ব্যবস্থাপনা: বিনিয়োগকারীদের জন্য নিয়মিত, সুস্পষ্ট এবং পরিমিত তথ্য সরবরাহ করতে হবে, যাতে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সবশেষে বলা যায়, বাজারে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সমন্বিত ও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি হয়ে উঠেছে। বিভ্রান্তিকর বার্তা এবং অস্পষ্ট নীতির পরিবর্তে, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা পুনর্গঠনে উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ