ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টাইব্রেকারে শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৮ ২২:০৯:১৩
টাইব্রেকারে শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ

নিজস্ব প্রতিবেদক:স্নায়ুচাপে জমে থাকা টাইব্রেকার। তিনটি শটের পর ৩-১ গোলের লিড। দেশের কোটি মানুষের চোখে তখন সম্ভাবনার আলো, বুকজুড়ে গর্বের ঢেউ। মনে হচ্ছিল, আরও একবার ট্রফি ছোঁবে বাংলাদেশের কিশোর হাতে গড়া দলটি। কিন্তু ফুটবল যেমন ভালোবাসা, তেমনি নির্মমতারও নাম। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নাটকীয় এক পালাবদলে ভারতের কাছে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হেরে শিরোপা হারালো বাংলাদেশ।

শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো

ম্যাচের বাঁশি বাজতেই ঘটে প্রথম ধাক্কা। ভারতীয় ফরোয়ার্ড এক চতুর শটে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মাহিন হোসেনকে পরাস্ত করেন—তাঁর মাথার ওপর দিয়ে বল জাল ছুঁয়ে যায়। মাহিন ছিলেন কিছুটা পোস্ট ছেড়ে। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের প্রথম মিনিটেই পিছিয়ে পড়া—এই একটি গোল যেন পুরো দেশের নিঃশ্বাস আটকে দেয়।

এরপর ভারতের একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত ছিল বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। তবে ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেয় লাল-সবুজের তরুণেরা। এক পর্যায়ে একটি বল ভারতের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। আবার ৪২ মিনিটে কর্নার থেকে বল জালে জড়ালেও রেফারির ফাউলের বাঁশি ছিনিয়ে নেয় সে আনন্দ। মাঠে দাঁড়িয়ে বাকরুদ্ধ ছিল পুরো দল, টিভি রিপ্লে বা চোখের দেখায় স্পষ্ট ছিল না সেই ফাউল!

জয় আসে, সমতা ফেরে

দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল চোখেমুখে। অবশেষে ৬২ মিনিটে আসে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। কর্নার থেকে বল ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়ে জয় আহমেদের পায়ে। ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তার শট ঢুকে পড়ে ভারতের জালে—ম্যাচে সমতা ফেরে। ভারতের বিপক্ষে টুর্নামেন্টে এটাই প্রথম গোল। গোটা বাংলাদেশ আনন্দে ফেটে পড়ে।

এরপর আরও কিছু সুযোগ তৈরি করেও ফিনিশিং ব্যর্থতায় গোল হয়নি। ইনজুরি টাইমে ভারতের একটা শক্তিশালী আক্রমণ ঠেকিয়ে রক্ষা পান মাহিন ও তাঁর সতীর্থরা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

৩-১ থেকে ছিটকে যাওয়া: ট্র্যাজেডির পাঠ

টাইব্রেকারে শুরুটা ছিল বাংলাদেশের স্বপ্নময়। একে একে গোল করেন মিঠুর চৌধুরি, মুর্শেদ আলী এবং জয় আহমেদ। একইসঙ্গে ভারতের দ্বিতীয় শট ঠেকিয়ে দেন মাহিন—তার প্রথমার্ধের ভুলটা যেন মুছে দেন এই দৃঢ়তায়। স্কোরলাইন তখন ৩-১।

তখনই যেন মাঠে নামে নাটকীয়তার কালো ছায়া। অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সাল—যিনি গোটা টুর্নামেন্টে ছিলেন বাংলাদেশের মেরুদণ্ড—তার শট বাইরে মারেন। চতুর্থ শটে ভারত গোল করে ব্যবধান কমায়।

শেষ শট নিতে আসেন শাহীন আহমেদ। তার শট ভারতের গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেন। এরপর ভারতের শেষ শট গোল হয়ে গেলে ম্যাচ শেষ, শিরোপা ভারতের। মাহিন লাফিয়ে পড়ে বল ধরার শেষ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ফুটবল তখন লিখে ফেলেছে এক নতুন বেদনার ইতিহাস।

সান্ত্বনা নয়, গর্বের মুকুট পরেই ফিরছে বাংলাদেশ

হয়তো ট্রফিটা হাতে আসেনি, কিন্তু জয় এসেছে অন্যত্র। ফুটবলীয় মনোবল, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, হার না মানা আত্মবিশ্বাসে বাংলাদেশের কিশোরেরা জয়ী। ভারত ছিল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল, একটিও গোল খায়নি আগে। সেই দলের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকেও ফিরে আসা, জাল কাঁপানো, আর টাইব্রেকারে তিন শট পর্যন্ত এগিয়ে থাকা—সবই দেখিয়েছে নতুন এক বাংলাদেশকে।

এ হার, জয়ের চেয়ে কম কিছু নয়। এই দলটাই একদিন শুধু সাফ নয়, এশিয়া কিংবা বিশ্বমঞ্চেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে—এই বিশ্বাস নিয়েই কিশোর বীরেরা ফিরছে দেশে।

তারা শিরোপা আনেনি, কিন্তু নিয়ে এসেছে এক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি—যা কোনো ট্রফির চেয়েও দামী।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ