ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্পের প্রস্তাবে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ প্রবাসীরা

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২১ ১১:৩৭:৫৪
ট্রাম্পের প্রস্তাবে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন কর আইনের প্রস্তাব ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামে এই প্রস্তাবিত আইনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্য দেশে অর্থ পাঠানোর ওপর ৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইনটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানো ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। এতে হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পথ ব্যবহার বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।

হুন্ডির আশঙ্কা

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী মনে করেন, এই আইন কার্যকর হলে অনেকেই অতিরিক্ত খরচ এড়াতে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডির পথ বেছে নিতে পারেন। তিনি বলেন, “ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়তি ৫ শতাংশ কর আরোপ হলে অনেকেই আনুষ্ঠানিক পথে টাকা পাঠাবেন না। বিকল্প হিসেবে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়বে। এতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “গত কিছুদিনে রেমিটেন্স বেড়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক। ডলারের বাজারও স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের আইন পাস হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের প্রবাহে বড়সড় প্রভাব পড়বে।”

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে—৩৯৪ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যেখান থেকে এসেছে ৩১২ কোটি ডলার।

এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও যুক্তরাষ্ট্র ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রদানকারী দেশ। সে সময় তারা পাঠায় ২৯৬ কোটি ডলার, যেখানে প্রথম স্থানে ছিল আরব আমিরাত (৪৬০ কোটি ডলার)।

২০২২-২৩ অর্থবছরেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সে বছর প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ৩৫২ কোটি ডলার, আর আমিরাত থেকে এসেছিল ৩৭৬ কোটি ডলার।

অতিরিক্ত খরচ কতো?

চলতি অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ৩৯৪ কোটি ডলারে যদি ৫ শতাংশ হারে কর আরোপ হতো, তাহলে প্রবাসীদের অতিরিক্ত গুনতে হতো ১৯.৭ কোটি ডলার—যার বাংলাদেশি মূল্য ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এ পরিমাণ কর আরোপের ফলে কতটা রেমিটেন্স কমে যেতে পারে, তা নিয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগ। তবে তারা বলছে, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে, সময়ই বলবে এর প্রকৃত প্রভাব।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, “অনেক আগেই এসব দেশে আলোচনা ছিল—বিদেশি কর্মীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে তারা করের মাধ্যমে অর্থের একটি অংশ নিজেদের দেশে রেখে দিতে চায়।”

তিনি মনে করেন, কর আরোপের ফলে প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পথ বেছে নিতে পারেন। এতে বৈধভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা কমবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা সর্বোচ্চ কিংবা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পেয়ে থাকি। সেক্ষেত্রে কর আরোপ করা হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিটেন্সে বড় প্রভাব পড়বে। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ঝুঁকিও বাড়বে।”

কোন প্রবাসীরা পড়বেন এর আওতায়?

এই আইনের আওতায় পড়বেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সেই সব ব্যক্তি, যারা দেশটির নাগরিক নন—এইচ-১বি, এফ-১ ভিসাধারী এমনকি গ্রিনকার্ডধারীরাও। তবে মার্কিন নাগরিকরা থাকবেন এই করের আওতার বাইরে। অর্থাৎ, দেশের বাইরে অর্থ পাঠাতে গেলে যেকোনো অঙ্কের রেমিটেন্সের ওপরই কর দিতে হবে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাদের একটি বড় অংশ নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন।

ট্রাম্পের এই কর প্রস্তাব আইনে পরিণত হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে আরও অনেক উন্নয়নশীল দেশ। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রভাবটা হবে তুলনামূলকভাবে বড়, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রেমিটেন্স উৎস। এখন দেখার বিষয়—যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এই বিল পাস হয় কি না এবং হলে সেটি কার্যকর হলে বাংলাদেশ কী ধরনের কৌশল নেয় এ ধাক্কা সামাল দিতে।

মোঃ রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ