ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডিএসই সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিল করল বিএসইসি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২১ ১৫:৫১:২২
ডিএসই সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিল করল বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর ১৭১) স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার সনদ বাতিল করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত আর্থিক অনিয়ম, বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ এবং সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে থাকায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত

বিএসইসির ‘মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স’ বিভাগ থেকে সম্প্রতি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে সনদ বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়। একই চিঠি সিডিবিএল (সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড) এবং সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও পাঠানো হয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ৬(১), ৬(২), ও ৭(৩); স্টক-ডিলার ও ব্রোকার বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১১ এবং দ্বিতীয় তফসিলের আচরণবিধি ১; পাশাপাশি ডিপজিটরি প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ৩৪(১) ও (২) লঙ্ঘন করেছে।

বাতিল হওয়া নিবন্ধন সনদ দুটি হলো:

নিবন্ধন নম্বর: ৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০৯/৩৪৭ (প্রদানকাল: ২১ জুন ২০০৯)

নিবন্ধন নম্বর: ৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০২/৬৪ (প্রদানকাল: ৫ মে ২০০২)

ডিএসইকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনে ঘাটতি

২০১৮-১৯ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিএসইর ১৮৬টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে অর্থের ঘাটতি ধরা পড়ে। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি টাকা।

পরে ২০২০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে, যা কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

মালিকানা পরিবর্তন ও পুনঃমূল্যায়ন

২০২২ সালের জানুয়ারিতে সাদ মুসা গ্রুপ প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করে। তারা হাউজটি পুনরায় কার্যক্রমে আনার উদ্যোগ নিলেও, বিএসইসি শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেয়—যার মধ্যে ছিল গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণ, সুদসহ অর্থ পরিশোধ এবং সঠিক শেয়ার হস্তান্তর নিশ্চিত করা।

তবে পরবর্তীকালে আরও বিশদ পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুধুমাত্র এই একটি হাউজ নয়, বরং মোট ১০৮টি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি টাকা, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।

মালিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা

সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা, মানি লন্ডারিং এবং অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলা রয়েছে। ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালত তাকে চেক প্রত্যাখ্যানের ৫টি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। মামলাগুলোর সম্মিলিত আর্থিক দাবি ছিল ৫৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এছাড়া, ২০২৪ সালের মে মাসে মহসিনসহ আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে প্রণোদনা প্যাকেজের ৪০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করে।

বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা

বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুরক্ষা এবং মূলধন বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিএসইসির এই সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রক নীতি অনুসারে সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, নিয়মভঙ্গকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা পুঁজিবাজারে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ