ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারীর সেল প্রেসার: সূচক বাড়ার পর বিক্রি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২১ ১৬:২৬:১৭
শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারীর সেল প্রেসার: সূচক বাড়ার পর বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজার গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক অস্থিরতায় রয়েছে। বাজারে সূচক সামান্য ঊর্ধ্বগতি পেলেই বড় ধরনের সেল প্রেসার তৈরি হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে; তবে বাস্তবে এসব পদক্ষেপ পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। আজ (২১ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক দিনের শুরুতে ২৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেলে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক সঙ্কেত পাওয়া গেলেও, পরবর্তীতে বড় বিনিয়োগকারীদের সেল প্রেসারে সূচক আবারও আগের অবস্থায় নেমে আসে। দিনের শেষে সূচক মাত্র ৬ পয়েন্টের বেশি ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় থাকল।

বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সূচক বাড়তে শুরু করলে তা থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য শেয়ার বিক্রির চাপ সৃষ্টি করেন। এর ফলে খুচরা বিনিয়োগকারীরা ভয় পান এবং তারা বিক্রয়ে ঝুঁকে পড়েন, যা বাজারকে নিম্নমুখী করে।

বিএসইসির একক সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় স্টেকহোল্ডারদের মতামতহীন হওয়ায় বাজারে আস্থাহীনতা বাড়ছে। কর্পোরেট গভর্ন্যান্স উন্নয়ন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, বোনাস ও নগদ বণ্টন সংক্রান্ত নিয়মকানুন প্রণয়নে পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ না হওয়ায় বাজারে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, যা দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ডিএসইএক্স সূচক ২০১৮ সালে প্রায় ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের কাছাকাছি ছিল, যা বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। বাজার মূলধনের এই সংকোচন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়েছে। এছাড়া, লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে, যা বাজারের সচলতা ও স্বাস্থ্যের সংকেত।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরে পেতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে নিয়মিত ও কার্যকর সংলাপ জরুরি। নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃস্থাপন করতে হবে।

বিশেষ করে, বড় বিনিয়োগকারীদের অস্বচ্ছ সেল প্রেসার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আইপিও অনুমোদনে মৌলিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনা করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।

শেয়ারবাজার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। তবে এটি কার্যকরভাবে কাজ করতে হলে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও বাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে সমন্বয় ও আস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন, অন্যথায় বাজার বারবার অস্থিরতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকবে।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

১. শেয়ারবাজারে সেল প্রেসার কী?

সেল প্রেসার বলতে বোঝায় বাজারে একসঙ্গে অনেক শেয়ার বিক্রি হওয়া, যা বাজারের মূল্য কমিয়ে দেয় এবং সূচক পতনের কারণ হয়।

২. কেন বড় বিনিয়োগকারীরা সূচক বাড়ার পর শেয়ার বিক্রি করেন?

বড় বিনিয়োগকারীরা লাভ সংরক্ষণ করতে সূচক বা শেয়ারের দাম বাড়ার পর বিক্রি করে, যা বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি করে।

৩. সেল প্রেসার কীভাবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে?

বিক্রির চাপ বাড়লে শেয়ারমূল্য কমে যায়, এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েন এবং তাদের আস্থা কমে যায়।

৪. বাজার স্থিতিশীল রাখতে কী পদক্ষেপ প্রয়োজন?

বাজারে আস্থা ফিরাতে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়, স্বচ্ছতা, ও জবাবদিহিতা জরুরি। বড় বিনিয়োগকারীদের বিক্রির নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ