ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিদেশে পাচার: সিপিডির বিশ্লেষণ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৪ ১৬:৫৫:০০
শেয়ারবাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিদেশে পাচার: সিপিডির বিশ্লেষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের শেয়ারবাজারে সংঘটিত অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পতনের পেছনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সুপরিকল্পিত অর্থ অপসারণের ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় শেয়ারবাজার: দর্শন ও অনুশীলন’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. দেবপ্রিয় জানান, উক্ত সময়কালীন শেয়ারবাজার ধসের ঘটনায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়, যার মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়।

তার মতে, শেয়ারবাজার থেকে এই অর্থ পাচার দেশের পুঁজিবাজারের ওপর দীর্ঘমেয়াদি আস্থার সংকট তৈরি করে এবং এর ফলে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

শাস্তিহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতা

ড. দেবপ্রিয় বলেন, শেয়ারবাজারে যে কোনো ধরনের অপচালনা বা কারসাজির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় বারবার একই ধরণের সংকট পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

“দুর্নীতি ও অনিয়ম দমন না করলে বাজারের স্বাভাবিক গতি স্থায়ী হবে না। বিচারহীনতা পুঁজিবাজারের কাঠামোগত দুর্বলতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।”

বাজার কাঠামো ও নীতিনির্ধারণে সংস্কারের প্রয়োজন

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের একটি মাধ্যম। কিন্তু এই বাজারে স্বল্পমেয়াদি মুনাফা অর্জনের মানসিকতা প্রবল হয়ে উঠেছে, যা বাজারকে অস্থির করে তোলে।

ড. দেবপ্রিয়ের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় যেসব নীতিগত দুর্বলতা আছে তা নিরসন না করলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই খাত কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, “শেয়ারবাজারের ক্রমাগত অস্থিরতা এবং আস্থা সংকট দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে সুসংহত নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং সময়োপযোগী সংস্কার প্রয়োজন।”

নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণ

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএসইসি কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. তাজনুভা জাবিন এবং আইসিএমএবি’র সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।

আলোচকরা পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত ব্যবস্থাপনা গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে উপস্থাপিত মতামত অনুযায়ী, শেয়ারবাজারের কার্যকরী সংস্কার এখন সময়ের দাবি, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ ও শিল্পায়নের গতি বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: শেয়ারবাজার থেকে কত টাকা পাচার হয়েছে?

উত্তর: ২০১০-১১ সালে শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন ২: এই অর্থ পাচারের পেছনে কারা জড়িত?

উত্তর: দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এই অর্থ অপসারণে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩: শেয়ারবাজারের কি ধরনের সমস্যা রয়েছে?

উত্তর: শেয়ারবাজারে বিচারহীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি এবং কারসাজি প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য কি প্রয়োজন?

উত্তর: সুসংহত নীতিমালা, কঠোর তদারকি, বিচারিক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত বাজার ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ