ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি কোম্পানি লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৭ ১৪:২৩:৩৮
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি কোম্পানি লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ

খেলাপি ঋণ ৮৩ শতাংশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকবহির্ভূত ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে বড় ধরনের শঙ্কা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়—এই ২০টির মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪টি।

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে, কেন তাদের নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হবে না। উত্তর দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে—প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ গ্রাহকের দায় পরিশোধে যথেষ্ট নয়, শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি এবং মূলধনের ঘাটতি রয়েছে।

যেসব তালিকাভুক্ত কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়ায়

তালিকায় থাকা ২০টির মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি প্রতিষ্ঠান হলো—

বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, ফারইষ্ট ফাইন্যান্স ও এফএএস ফাইন্যান্স।

অবশ্য বাকি ছয়টিও তালিকায় রয়েছে—যেগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হলেও এনবিএফআই খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল একসময়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—সিভিসি ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি ও আভিভা ফাইন্যান্স।

চমকে দেওয়া তথ্য: খেলাপি ঋণ ৮৩ শতাংশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে—এই ২০টি প্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ বিতরণ করা হয় প্রায় ২০ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে ৮৩ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে গেছে, যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।

এই ঋণ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জামানতের পরিমাণ মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে সকল আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।

প্রতিষ্ঠান চালাতে বছরে খরচ ২০০ কোটি, আয় প্রায় শূন্য

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই ২০টি প্রতিষ্ঠান বছরে বেতন-ভাতা বাবদ খরচ করে ১৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বেতন ১২ কোটি টাকা। অফিস ভাড়া, প্রশাসনিক খরচসহ মোট ব্যয় ২০৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। অথচ প্রকৃত সুদ-আয় প্রায় শূন্য—যা থেকে স্পষ্ট, প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।

পি কে হালদারের ছায়া এখনো স্পষ্ট

এই তালিকার অনেক প্রতিষ্ঠানেই এক সময় অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হন বহুল আলোচিত আর্থিক প্রতারক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নিয়েছিলেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে। পি কে হালদার যে অনিয়মের ধারা চালু করেছিলেন, তা পরে আরও বিস্তৃত হয় ইসলামী ধারার ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। যার ছাপ এখন স্পষ্ট এই ২০টি প্রতিষ্ঠানে।

সম্ভাব্য পরিণতি: একীভূতকরণ না অবসায়ন?

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—চিঠির জবাব বিশ্লেষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করা হতে পারে অথবা সম্পূর্ণরূপে অবসায়ন করা হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মতে, এনবিএফআই খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। কারণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম পুরো খাতকে ডুবিয়ে দেওয়ার মতো ঝুঁকি তৈরি করেছে। আর এর সবচেয়ে বড় আঘাত আসতে পারে সাধারণ আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের ওপর।

FAQ (সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর)

১. কেন ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে?

উত্তর: এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা চরম দুর্বল, খেলাপি ঋণ ৮৩ শতাংশ এবং জামানতের পরিমাণ কম থাকায় আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।

২. শেয়ারবাজারে কতটি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল হতে পারে?

উত্তর: ২০টির মধ্যে ১৪টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, যাদের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে।

৩. আমানতকারীদের কি তাদের টাকা ফেরত পাবেন?

উত্তর: বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া পর্যায়ে, তাই সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে।

৪. ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হতে পারে?

উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত বা অবসায়ন করতে পারে, যাতে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক: দূরপাল্লার কূটনীতির আরেকটি অধ্যায় শুরু করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ এক... বিস্তারিত