ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন? সরকার-ইসির চূড়ান্ত রোডম্যাপ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৭ ১৫:০২:১২
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন? সরকার-ইসির চূড়ান্ত রোডম্যাপ

রোডম্যাপ প্রকাশের অপেক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গন, ফেব্রুয়ারির ভোটে ঐকমত্যের ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা আর সংস্কারের দাবি ঘিরে বহুদিন ধরেই স্থবির ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। অবশেষে সেই স্থবিরতা যেন ভাঙার অপেক্ষায়। অন্তর্বর্তী সরকারের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। সম্ভাব্য তারিখ—৯, ১০ বা ১১ ফেব্রুয়ারি। তবে ১০ ফেব্রুয়ারিই হতে পারে ভোটগ্রহণের দিন। নির্বাচন কমিশন এ সময়কেই সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং একটি রোডম্যাপ প্রকাশের প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত।

এই রোডম্যাপ কেবল নির্বাচনের দিকনির্দেশনাই নয়, রাজনৈতিক সংকট নিরসনেরও পথ দেখাবে বলে বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট মহলের।

সময়ের নির্বাচন ফেব্রুয়ারি?

২০২৬ সালে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে রমজান। এরপর মার্চ থেকে জুন—পরপর রয়েছে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা, দুই ঈদ এবং প্রচণ্ড গ্রীষ্ম। ফলে সময়ের ক্যালেন্ডার থেকে এমনিতেই বহু মাস বাদ পড়ে গেছে। এই বাস্তবতায় ফেব্রুয়ারিকে সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মনে করছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।

इतিহাস বলছে, দেশের আগের ১২টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে তিনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। আবহাওয়া অনুকূল, কৃষির ব্যস্ততা তুলনামূলক কম, আর রাজনৈতিক মাঠ থাকে তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত। সব মিলিয়ে, ফেব্রুয়ারি যেন রাজনীতির জন্য তৈরি একটি স্বচ্ছ ক্যানভাস।

মতভেদের ভেতরেও সহমত

নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও এখন আগের চেয়ে অনেকটা স্পষ্ট।

বিএনপি চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। তাদের বক্তব্য, সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত নতুন সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।

অন্যদিকে, সরকার বলছে—“সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়।”

এই টানাপোড়েনের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান পোক্ত করছে জামায়াতে ইসলামী, যারা রোডম্যাপ চাইলেও বিচার ও সংস্কারকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

আর সবচেয়ে আলোচিত পক্ষ এনসিপি—নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে গঠিত রাজনৈতিক মঞ্চ। গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া এই দল নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল সংস্কার এবং ‘ফ্যাসিবাদীদের’ বিচারের জোর দাবি তুলেছে।

সরকারও ইতোমধ্যে সাড়া দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেশ কিছু সাবেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।

রক্তের ঋণ ও ভোটের প্রস্তুতি

“দেড় হাজার শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই সরকার কোনোভাবেই দায়সারা নির্বাচন করতে পারে না”—এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা।

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এখন স্পষ্ট: সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন পথই সমান গুরুত্ব পাবে।

তবে সময় সংকীর্ণ। যদি সংস্কার সীমিত রাখা হয়, তাহলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর সংস্কার দীর্ঘমেয়াদি হলে তা জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে। এই দুই প্রান্তের মাঝামাঝি হয়ে উঠছে ফেব্রুয়ারি—একটি আপসহীন বাস্তবতা, আবার রাজনৈতিক সমঝোতার কেন্দ্রবিন্দু।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, রোডম্যাপ রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাবে এবং সুশৃঙ্খল নির্বাচন সম্ভব করে তুলবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তা হবে সব পক্ষের জন্য মানানসই একটি সমাধান।” তবে এনসিপির সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়েও কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। “তারা যদি চূড়ান্ত সময়ে আন্দোলনের পথে নামে, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। তবে ছাত্রনেতাদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত প্রভাব ও নীতিগত সমঝোতা বিবেচনায় সরকার সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।”

এক ভোরের অপেক্ষায় রাজনীতি

বিচার ও সংস্কারের ধারায় হাঁটতে হাঁটতেই বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। নতুন পথের সন্ধান চলছে—যেখানে একটি নির্বাচনের ভেতর লুকিয়ে আছে বহু স্বপ্ন, বহু সংশোধন, বহু প্রতিবাদ এবং বহুল প্রত্যাশিত পরিবর্তনের সুর।

ফেব্রুয়ারির নির্বাচনী ভোর কি তবে সত্যিই আসবে?

উত্তর হয়তো সময়ই দেবে, তবে প্রস্তুতি, প্রচেষ্টা এবং পরিবর্তনের আভাসে স্পষ্ট—বাংলাদেশ রাজনীতি এক নতুন গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে।

FAQ (প্রশ্ন-উত্তরসহ)

প্রশ্ন ১: জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হতে পারে?

উত্তর: সম্ভাব্য তারিখ ৯, ১০ বা ১১ ফেব্রুয়ারি, তবে ১০ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

প্রশ্ন ২: সরকার ও ইসির রোডম্যাপে কী থাকছে?

উত্তর: নির্বাচনের সময়সূচি, সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পরিকল্পনা।

প্রশ্ন ৩: কেন ফেব্রুয়ারিকে উপযুক্ত সময় ধরা হচ্ছে?

উত্তর: রমজান, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা ও গ্রীষ্মকালীন দুর্ভোগ এড়িয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের উপযোগী সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারি ধরা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: বিএনপি ও এনসিপির অবস্থান কী?

উত্তর: বিএনপি ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়, আর এনসিপি আগে রাষ্ট্র সংস্কার ও বিচার চায়; তবে সরকার ভারসাম্য রক্ষায় আগাচ্ছে।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক: দূরপাল্লার কূটনীতির আরেকটি অধ্যায় শুরু করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ এক... বিস্তারিত