শেয়ারবাজারে দরপতন, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধরনের পতনের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে, যা গত ১১ বছর ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি সূচক ছিল ৪ হাজার ৬৭৫ পয়েন্ট, যা এখন পুনরায় পৌঁছেছে। এই পতনের ফলে বাজার ২০১৪ সালের অবস্থানে ফিরে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি করেছে।
টানা দরপতনের কারণে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। অনেক বিনিয়োগকারী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলেও বাজারে বর্তমান অবস্থা তাদের জন্য খুবই অনুকূলে নয়। অনেকের জন্য মূলধন উত্তোলন করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
মোহাম্মদপুরের এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, “আমার ১০ লাখ টাকার বিনিয়োগ বর্তমানে পৌনে দুই লাখ টাকায় নেমে এসেছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। মনে হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা, আস্থা ও কার্যকর নীতিমালার অভাব স্পষ্ট। অনেক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ইতিবাচক হলেও তা শেয়ারদরে প্রতিফলিত হচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কৃত্রিম চাপ ও অস্বাভাবিক শেয়ার দর ওঠানামার বিষয়টি লক্ষণীয়। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে সুবিন্যস্ত নীতিমালার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভিতর পারস্পরিক মতবিরোধ এবং দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। কমিশনের সঙ্গে শেয়ারবাজারের প্রধান অংশীদারদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন, বাজারে অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও কার্যকর নীতিগত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সময় সময়ে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেন, অনেক কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের যথাযথ ডিভিডেন্ড না দেওয়ার পাশাপাশি ডিভিডেন্ড দেওয়া হলেও তার প্রভাব শেয়ারদরে দেখা যাচ্ছে না। ইনসাইডার ট্রেডিং এবং অস্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বাজারে আস্থা কমে যাচ্ছে।
তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কঠোর নজরদারি, বাস্তব পদক্ষেপ ও অংশগ্রহণমূলক সংলাপ প্রয়োজন।
বাজারের সাম্প্রতিক অবস্থা:
আজ ডিএসই সূচক ৪১.২৫ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে নেমেছে। এর আগে গত কয়েক দিনে সূচক ধারাবাহিক পতনের মুখে পড়েছিল। আজ ডিএসইতে ২৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের থেকে প্রায় ৩ শতাংশ কম।
লেনদেনকৃত ৩৯২টি কোম্পানির মধ্যে ৮৩টির শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে, ২৩৭টির দর কমেছে এবং ৩৬টির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেন কমে ১০ কোটি ১২ লাখ টাকায় নেমেছে। এখানে ২০৭টি কোম্পানির মধ্যে ৬১টির শেয়ার দর বেড়েছে, ১১৫টির কমেছে এবং ৩১টির অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইর সূচক সিএএসপিআই ৫০ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত এবং কার্যকর নীতিমালা গ্রহণের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ।
জাকারিয়া ইসলাম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে কারসাজির চক্র: দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দামে অস্বাভাবিক উল্লম্ফন
- ৩ কোম্পানির কারখানায় ঝুলছে তালা, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
- ৮ প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণা, ছয় কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা খেলো ধাক্কা
- শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় আইসিবির বিশেষ তহবিল থাকবে ২০৩২ সাল পর্যন্ত
- এশিয়া কাপ ২০২৫: তিন ওপেনার নিয়ে বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা
- রপ্তানি আয়ের ৮ হাজার কোটি টাকা গায়েব: কেয়া গ্রুপ ও চার ব্যাংককে তলব
- ভারত বনাম বাংলাদেশ : ৯০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বাঁচা মরার ম্যাচ
- বদলে গেল ফোনের ডায়াল প্যাড, জানুন আসল কারণ ও আগের অবস্থায় ফেরানোর উপায়
- ভারত বনাম বাংলাদেশ: গোল, গোল, ৮০ মিনিটের খেলা শেষ
- বদলে গেল আপনার ফোনের ডায়াল প্যাড, আতঙ্ক নয় সমাধান আছে, জেনে নিন
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা
- ‘ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’—ড. ইউনূস
- গুজব না সত্য: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা হাসিনার পদত্যাগপত্র খুঁজে পায়নি
- বীমা খাতে সুবাতাস, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৯ কোম্পানির মুনাফায় উল্লম্ফন