ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আর্থিক দুরবস্থায় ১৮ ব্যাংককে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার নির্দেশ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৮ ১৪:৩১:২৬
আর্থিক দুরবস্থায় ১৮ ব্যাংককে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে ২০২৪ সালের জন্য কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড ঘোষণা বা বিতরণ করতে নিষেধ করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২২ ধারার আলোকে ২০২৪ সালের ২১ মে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, এসব ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল এবং তাদের প্রভিশন সংরক্ষণে ঘাটতি রয়েছে। তাই ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য তারা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে কোনো প্রকার লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না।

নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন ব্যাংকসমূহ:

১. এবি ব্যাংক

২. আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক

৩. এক্সিম ব্যাংক

৪. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

৫. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

৬. আইএফআইসি ব্যাংক

৭. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ

৮. মার্কেন্টাইল ব্যাংক

৯. এনআরবি ব্যাংক

১০. এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক

১১. প্রিমিয়ার ব্যাংক

১২. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

১৩. এসবিএসি ব্যাংক

১৪. সাউথইস্ট ব্যাংক

১৫. স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক

১৬. ইউনিয়ন ব্যাংক

১৭. ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)

১৮. রূপালী ব্যাংক (রাষ্ট্রায়ত্ত)

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, যেসব ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি পূরণে 'ডেফারেল সুবিধা' গ্রহণ করেছে, তাদের ডিভিডেন্ড বিতরণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন চূড়ান্তে সময় বৃদ্ধি

প্রভিশন ঘাটতির কারণে এই ১৮টি ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সময়সীমা ৩০ এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত করেছে। একই সঙ্গে, অধিকাংশ ব্যাংককে প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য বাড়তি সময়ও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নতুন নির্দেশনা ও নীতিমালা

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যেসব ব্যাংকের ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতি থাকবে, তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে ঘাটতির তথ্য প্রকাশ করতে হবে। প্রভিশন, মূলধন পর্যাপ্ততা ও লাভ-ক্ষতির চিত্র সুনির্দিষ্টভাবে দেখাতে হবে। এ ছাড়া, এসব ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে সময়বদ্ধ ও বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে বোর্ড অনুমোদনসাপেক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও প্রেরিত তথ্যে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও একটি নির্দেশনা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়—যেসব ব্যাংক ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ করবে, তারা কোনোভাবেই ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। আগামী বছর থেকে এ বিধিনিষেধ আরও কঠোরভাবে কার্যকর হবে; বিশেষ করে, যেসব ব্যাংকের মোট ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি, তারাও এই বিধিনিষেধের আওতায় আসবে।

বিএবি’র অবস্থান

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, "ব্যাংকের আস্থার ভিত্তি হলো আমানতকারী, গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডার। ডিভিডেন্ড না দিতে পারলে এই আস্থায় প্রভাব পড়তে পারে।" তিনি আরও জানান, ডিভিডেন্ড নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হলেও অবস্থানে পরিবর্তন আসেনি।

ডিভিডেন্ড ঘোষণাকারী ব্যাংকসমূহ

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ১৬টি ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

ওয়ান ব্যাংক মুনাফা অর্জন করলেও ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। অন্যদিকে, ঢাকা ব্যাংক শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি পাওয়ার পর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ