ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সুখবর: বাংলাদেশ থেকে এক লাখ শ্রমিক নিয়োগে দিবে জাপান

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৯ ১৪:১০:১৩
সুখবর: বাংলাদেশ থেকে এক লাখ শ্রমিক নিয়োগে দিবে জাপান

শুধু চাকরি নয়, সম্ভাবনার দরজাও খুলছে—আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের জাপানি স্বীকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাপান, সূর্যোদয়ের দেশ, এবার বাংলাদেশি তরুণদের জন্য সম্ভাবনার নতুন এক সূর্যোদয়ের বার্তা নিয়ে এলো। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেবে জাপান—এমনই ঘোষণা এসেছে টোকিওর তোশি কাইকান কনফারেন্স হল থেকে।

বাংলাদেশ-জাপান মৈত্রীর ইতিহাসে এই ঘোষণা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মানবসম্পদ বিষয়ক সেমিনারে’ উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের অগ্রপথিকরা। আর সেই মঞ্চেই ভবিষ্যতের রূপরেখা এঁকে দিলেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস।

“আজকের দিনটি আমার জীবনের অন্যতম আনন্দদায়ক”

উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনুস বলেন,

“আজকের দিনটি আমার জীবনের অন্যতম আনন্দদায়ক ও অনুপ্রেরণাদায়ক। এটি কেবল কর্মসংস্থানের সুযোগ নয়—বাংলাদেশিদের জন্য জাপানকে জানার, শেখার ও নিজেদের গড়ে তোলার এক বিরাট সুযোগ। সরকার এ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।”

কাগজে-কলমে নয়, বাস্তব উদ্যোগেই দৃশ্যমান অগ্রগতি

অনুষ্ঠানে স্বাক্ষরিত হয় দুইটি সমঝোতা স্মারক (MoU)—

১. বাংলাদেশ সরকারের বিএমইটি ও জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ কাইকোম ড্রিম স্ট্রিট (KDS) এর মধ্যে।

২. বিএমইটি, ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (NBCC) এবং জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি (JBBBRA) এর মধ্যে।

এই চুক্তিগুলো শুধু কাগুজে চুক্তি নয়—এই চুক্তির আড়ালে রয়েছে লাখো পরিবারের স্বপ্ন, হাজারো তরুণের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা।

“বাংলাদেশিদের প্রতিভা বিকাশে আমরা দায়বদ্ধ”

জাপানি প্রতিনিধিরা বাংলাদেশি তরুণদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।

মিৎসুরু মাতসুশিতা, শিজুওকার ওয়ার্কপ্লেস কোঅপারেটিভের প্রতিনিধি পরিচালক বলেন,

“বাংলাদেশিরা অসাধারণ সম্ভাবনাময়। তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারলে তারা শুধু নিজেদের নয়, জাপানের উন্নয়নেও সমান অবদান রাখতে পারবে।”

এনবিসিসি’র চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা মনে করিয়ে দিলেন,

“১৪ বছর আগে ইউনুস সান জাপানে এসেছিলেন নারীদের মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে কথা বলতে। আজ আমরা সেই কথার বাস্তব রূপ দেখছি। আমাদের লক্ষ্য, আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ বাংলাদেশিকে স্বাগত জানানো।”

প্রযুক্তি ও ভাষার চ্যালেঞ্জে প্রস্তুত বাংলাদেশ

জাপানের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ওয়াতামি গ্রুপ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ স্কুল চালাচ্ছে, যেখানে প্রতিবছর ১৫০০ শিক্ষার্থী টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট মিকি ওতানাবে বলেন,

“এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০০ করার লক্ষ্য রয়েছে। জাপানের বাজারে প্রবেশের জন্য আমরা তাদের তৈরি করছি।”

তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

জিটকো’র চেয়ারম্যান হিরোআকি ইয়াগি জানান,

“ভাষা শিক্ষকের ঘাটতি এখনও বড় বাধা। তবে সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশিরা জাপানে বিশাল অবদান রাখতে পারবে।”

“দুই দেশের ভবিষ্যৎ এক সুতোয় গাঁথা”

জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রাজ্যমন্ত্রী নিকি হিরোবুমি বলেন,

“জাপানে জনসংখ্যা কমছে, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী সংকুচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এটি বড় সুযোগ। আমরা সেই সুযোগকে দুই দেশের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগাতে চাই।”

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী একটি বিস্ময়কর তথ্য তুলে ধরেন—

“২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে শ্রমিক ঘাটতি ১ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখনই যদি সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়, বাংলাদেশ সেই শূন্যস্থান পূরণে অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে।”

শুধু বিদেশ যাত্রা নয়, এটি এক নতুন অধ্যায়ের শুরু

এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য শুধু বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, মানবসম্পদের গুণগত উন্নয়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ।

স্মরণ রাখা দরকার, ১৮ কোটি মানুষের এ দেশে অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠীর বয়স ২৭ বছরের নিচে। তরুণ এই শক্তিকে দক্ষ করে তুলতে পারলে, তারা শুধু জাপান নয়—বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়ে দিতে পারে।

জাপানে কর্মজীবনের শুরু হতে পারে একটি পরিবারের স্বপ্নপূরণ, একটি গ্রামের উন্নয়ন, কিংবা একটি দেশের গর্বের প্রতীক।

শুরু হলো বাংলাদেশিদের ‘জাপানি অধ্যায়’। এখন শুধু দরজা খুলেছে—প্রস্তুত থাকতে হবে প্রবেশের জন্য।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ